শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত দুটি বড় মামলায় রায় সংশোধন করল হাইকোর্ট। মঙ্গলবার শিক্ষকের চাকরি সংক্রান্ত দু’টি রায়কে সংশোধন বা পরিমার্জন করলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে গত ১২ মে এক ধাক্কায় ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি। মঙ্গলবার সেই রায় সংশোধন করলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এছাড়াও ববিতা সরকারের চাকরি বাতিল করে সেই চাকরি অনামিকা রায়কে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।
প্রাথমিকে নিয়োগে ৩৬ হাজার চাকরি বিক্রির রায় সংশোধনের আবেদন সোমবারই জমা পড়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। ৩৬ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এছাড়াও ওই রায়ে মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে ‘ভুল’ তথ্য রয়েছে জানিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে পৃথক একটি আবেদনও জমা পড়ে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বস্তি পেলেন ৪০০০ শিক্ষক।
আবেদনে ‘টাইপোগ্রাফিক্যাল’ ভুল নিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মামলকারীদের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। তিনি বলেন, প্রথম ভুল ছিল প্যানেলের সর্বনিম্ন নম্বরে। রায়ে লেখা হয়েছিল ১৪.১৯১, যা সংশোধন করে ১৩.৭৯৬ হবে। দ্বিতীয় ভুল ছিল, ‘৩৬’ হাজার। অপ্রশিক্ষিতের সংখ্যা ৩৬ হাজার নয়, ৩০,১০০।
এই আবেদনের শুনানি শেষেই প্রায় ৩২ হাজার শিক্ষকের ক্ষেত্রে ১২ মের রায় কার্যকর হবে বলে জানায় আদালত। অর্থাৎ, রায় সংশোধনের ফলে চাকরি বাতিল হওয়া থেকে রক্ষা পেলেন ৪ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক।
একই দিনে ববিতা সরকারের চাকরিও বাতিল করে দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। গত বছর ২০ মে, নিয়োগ বেনিয়মের অভিযোগে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর চাকরি বাতিল করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। অঙ্কিতার বদলে সেই চাকরি পান যোগ্য প্রার্থী তালিকায় নাম থাকা ববিতা সরকার। কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ ইন্দিরা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে যোগ দেন তিনি।
সেই সময় অঙ্কিতার চাকরির পাশাপাশি বেতন হিসাবে পাওয়া টাকাও ববিতাকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। মঙ্গলবার ববিতার সেই নিয়োগ বাতিল করে তাঁর জায়গায় আর এক চাকরিপ্রার্থী অনামিকা রায়কে নিয়োগপত্র দেওয়ার নির্দেশ দিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
পাশাপাশি, পরেশ-কন্যা অঙ্কিতার থেকে পাওয়া ১৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৪৩ টাকা হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দেওয়ার জন্যও ববিতাকে নির্দেশ দিয়েছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তবে, চাকরিতে যোগদানের পরে ববিতা যে বেতন পেয়েছেন, তা তাঁকে ফেরত দিতে হবে না বলেই জানিয়েছে আদালত।
ববিতার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এসএসসি পরীক্ষার আবেদন জানানোর সময় স্নাতক স্তরের শতকরা নম্বর তিনি বাড়িয়ে দেখিয়েছিলেন। যার ফলে তাঁর ‘অ্যাকাডেমিক স্কোর’ বেড়ে গিয়েছে। সেই ‘ভুল’কে হাতিয়ার করে আদালতের দ্বারস্থ হন প্রার্থীতালিকার ২১ নম্বরে থাকা অনামিকা। বিষয়টি পর্যবেক্ষণের পর ববিতার চাকরি অনামিকাকে দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারপতি।