কলকাতা: বিতর্কের সূচনা হয়েছিল ইউটিউবে ছবির ট্রেলার সামনে আসার পর থেকেই৷ ক্রমেই জমাট বাঁধতে থাকে বিতর্কের কালো মেঘ৷ মুক্তির পর দেশজুড়ে শোরগোল ফেলে বাঙালি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। একদল এই ছবিটিকে অকুন্ঠ সমর্থন জানালেও, অপর একদল বিরোধিতায় সোচ্চার।
কিন্তু কেন এত বিতর্ক? ঠিক কী দেখানো হয়েছে এই ছবিতে? অনেকে মনে করছেন, বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘দ্য কাশ্মীর ফাইল্স’কেও ছাপিয়ে যাচ্ছে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। তবে এই ছবির গল্প নিঃসন্দেহে বিতর্কিত৷ ছবিটির মূল চিত্রনাট্য আবর্তিত হয়েছে হিন্দু মহিলাদের উপর ইসলাম আগ্রাসনকে কেন্দ্র করে৷ ধর্মীয় ভেদাভেদ বিতর্কের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে।
দ্য কেরালা স্টোরি ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের নাম শালিনী উন্নিকৃষ্ণণ। এই হিন্দু তরুণী ভাগ্যের ফেরে হয়ে ওঠেন ফতিমা। কী ভাবে শালিনীকে ‘ফাঁদে’ ফেলে ফতিমা করে তোলা হল, কী ভাবে তাঁর ধর্ম পরিবর্তিত হল, সেই কাহিনিই রুপোলি পর্দায় তুলে ধরেছেন সুদীপ্ত।
শুধু হিন্দু থেকে মুসলমান হয়ে যাওয়া নয়, ধর্ম পরিবর্তন বদলে দেয় শালিনীর জীবন৷ তাঁর উপর নেমে আসে দুর্ভাগ্যের খাঁড়া। পরিস্থিতির জালে জড়িয়ে সিরিয়ার জঙ্গি দলে যোগ দিতে বাধ্য হন তিনি। ধর্মান্তরিত সেই নারীর অসহায় জীবন সংগ্রামকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হতে থাকে ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। তবে শুধু হিন্দু নয়, পরিচালক এই ছবিতে দেখিয়েছেন, কেরলে ধর্মান্তরণের ‘ফাঁদে’ পা দিয়ে কী ভাবে সর্বনাশা জীবনকে আহ্বান জানিয়েছেন খ্রিস্টান মহিলারাও।
দ্য কেরালা স্টোরির ট্রেলারে এক ভয়ঙ্কর দাবি করা হয়েছে৷ সেখানে বলা হয়েছে, কেরলে প্রায় ৩২ হাজার মহিলা ধর্মান্তরিত হয়েছেন৷ ইচ্ছার বিরুদ্ধেই এই কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। এই তথ্য পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক দানা বেঁধেছে৷ বিরোধীরা এই ছবিকে ইসলাম বিরোধী বলে দাগিয়ে দিয়েছে৷
যদিও পরিচালক নিজে এই ছবিকে কোনও ভাবেই ‘ইসলামবিরোধী’ মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, তিনি সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি ছবি তৈরি করেছেন। নেপথ্যে রয়েছে অনেক গবেষণা, পরিশ্রম এবং তথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ।
সুদীপ্তর কথায়, ‘‘আমি ছবিতে কখনওই বলতে চাইনি যে কেরলের সব মেয়েদের ধর্মান্তরণ হচ্ছে এবং তাঁরা আইসিস-এ যোগ দিচ্ছেন। আমার প্রশ্ন, মেয়েগুলো একেবারে উবে যাচ্ছে কী ভাবে?’’ কেরলে ধর্মান্তরণকে ঘিরে এক নিষ্ঠুর এবং করুণ চক্র চলছে বলেই তাঁর দাবি৷
তিন নারী চরিত্রকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হওয়া ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত বলেই দাবি পরিচালক সুদীপ্ত সেনের। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘যাঁদের কাহিনি অবলম্বনে এই ছবি, তাঁদের মধ্যে এক জন এখনও আফগানিস্তানের জেলে বন্দি। অন্য জন আত্মঘাতী হয়েছেন৷ বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে তাঁর পরিবার। আর এক জন বারবার ধর্ষিত হয়েছেন। আপাতত গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন তিনি৷’’
এই ছবির প্রশংসা করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ তাঁর দাবি, এই ছবি সমাজে সন্ত্রাসবাদের মুখোশ খুলে দেবে। ইতিমধ্যেই দ্য কেরালা স্টোরি করমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার। তবে এই ছবি নিয়ে আপত্তি তুলেছে বিরোধীরা৷ পশ্চিমবঙ্গে দ্য কেরালা স্টোরি নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বামশাসিত কেরলেও এই ছবিটি নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
এদিকে, মুক্তির আগেই বাদ পড়েছে ছবির অন্তত ১০টি দৃশ্য৷ ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র উপর যেথাচ্ছ কাঁচি চালিয়েছে সেন্সর বোর্ড। বাদ দেওয়া হয়েছে কেরলের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভিএস অচ্যুতানন্দের সাক্ষাৎকারের অংশ৷ ছবির বেশ কিছু দৃশ্যে হিন্দু দেবদেবীদের নিয়ে সংলাপ ছিল। সেই সংলাপও বাদ পড়েছে। ছবির একটি সংলাপে বলা হয় ‘ভারতীয় কমিউনিস্টরা দু’মুখো’। সেখান থেকে ‘ভারতীয়’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র একটি দৃশ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আগামী দু’দশকের মধ্যে এই রাজ্য মুসলিম অধ্যুষিত রাজ্যে পরিণত হবে।’’ বিতর্কিত এই সংলাপের জন্য কাঁচি চলানো হয়েছে গোটা দৃশ্যের উপরেই৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>