করোনা আতঙ্কে খোদ্দের হারাচ্ছে নিষিদ্ধপল্লি! মাথায় হাত যৌনকর্মীদের

সংক্রমণ রুখতে সাময়িকভাবে এই কাজ বন্ধ রাখার উপরেই জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কলকাতার নিষিদ্ধপল্লীগুলিতে করোনা রোধের নিয়মবিধি সম্বলিত পোস্টার লাগানো হয়েছে। যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ওপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।

কলকাতা: করোনা আতঙ্কের প্রভাবে রোজগারে টান পড়ছে এমন পেশার সঙ্গে জড়িত বহু মানুষ। তাঁদের মধ্যেই আছেন যৌনকর্মীদের একটা বড় অংশ। তাই একদিকে নিজেদের নিরাপত্তা আবার অন্যদিকে গ্রাহক কমে যাওয়া, দুদিক থেকেই রুজি-রোজগার নিয়ে একপ্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন দেশের মেট্রো শহরগুলির দেহ ব্যবসায়ীরা। কলকাতার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ থেকে দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট হয়ে রবীন্দ্র সরণি পর্যন্ত বিস্তৃত নিষিদ্ধপল্লী অঞ্চলে তাই রাতের অন্ধকার এখন আশেপাশের সাধারণ অঞ্চলের মতই গাঢ়। দিনভর কর্মব্যস্ত রাতের কলকাতা যখন ঘুমিয়ে পড়ে ঠিক তখনই কর্মব্যস্ত হয়ে ওঠে এই এলাকা। যেখানে রাতের অন্ধকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আলোর রোশনাই আর মানুষের ভিড়। কিন্তু কোভিড-১৯ এর আতঙ্কে রাতের অন্ধকারে শূনসান এই গলিগুলো এখন যেন বড্ড বেমানান।

কলকাতার বউবাজার, কালীঘাট, খিদিরপুর, ওয়াটগঞ্জের নিষিদ্ধপল্লীগুলোর চিত্রটাও একইরকম। আসলে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ থেকে বাঁচার প্রধান উপায় যেখানে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, এমনকি নিজের চোখে, মুখে নিজেরই হাতের স্পর্শে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে সেখানে যৌনপেশায় সংস্পর্শ এড়ানো কোনোভাবেই সম্ভবই নয়। তাও বহিরাগতদের। এদিকে সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বড়সড় জমায়েত। তারওপর এইসমস্ত অঞ্চলে জমায়েত মানেই অজানা, অচেনা মানুষের আনাগোনা। 

পরিসংখ্যান বলছে অন্যন্য সময় দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিট, অবিনাশ কবিরাজ স্ট্রিট, মসজিদ বাড়ি লেন, রবীন্দ্রসরণি, শেঠবাগান, রামবাগান মিলিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ হাজার খদ্দের আসা-যাওয়া করে এখানে। তাঁদের সঙ্গে যুক্ত অস্থায়ী ও স্থায়ীবাসিন্দা মিলিয়ে অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার যৌনকর্মীর দৈনিক অন্ন সংস্থানের উপায়। কিন্তু এই পেশা এমনই যেখানে করোনা প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যূন্যতম নিয়মবিধি মেনে চলাও সম্ভব নয়। তাই নিতান্তই প্রাণের দায়ে আপাতত পেটের টানও মেনে নিয়েছেন বহু যৌনকর্মী। তবুও সচেতনতার অভাব রয়েছে বা পরিস্থিতির তুলনায় উপার্জনের ওপরেই গুরুত্ব দিতে হচ্ছে অনেককেই।

যদিও এই পেশায় যুক্ত কর্মীদের অসুবিধার কথা মেনে নিলেও সংক্রমণ রুখতে সাময়িকভাবে এই কাজ বন্ধ রাখার উপরেই জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিষিদ্ধপল্লীগুলির জন্য বিশেষভাবে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। করোনা রোধের নিয়মবিধি সম্বলিত পোস্টার লাগানো হয়েছে প্রতিটি এলাকায়। যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ওপরেও জোর দেওয়া হচ্ছে।  দূর্বার কমিটি এই যৌনকর্মীদের জন্য আজ অর্থাৎ সোমবার থেকে তাদের সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − fourteen =