কলকাতা: করোনা আক্রান্ত গোটা বিশ্ব৷ করোনাকে ‘মহামারী’ বলে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ মুখ থুবড়ে পড়েছে শেয়ারবাজার৷ করোনা রুখতে ইতিমধ্যেই একগুচ্ছ বিধি-নিষেধ জারি করেছে কেন্দ্র-রাজ্য৷ নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা৷ আর বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে সপ্তম রাজ্য হিসাবে বাংলায় স্কুল ছুটির ঘোষণা করেছে নবান্ন৷ এবার সেই ছুটির সময়সীমা আরও বাড়ানোর ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ স্কুল ছুটিতে কী করবেন শিক্ষকরা? তাও জানিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ কিন্তু, বর্ধিত ছুটি সৌজন্যে সিলেবাস শেষ করার এখন বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সামনে৷ সিলেবাস শেষ না হলে চলতি শিক্ষাবর্ষে পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ারও অঙ্ক কষতে শুরু করেছেন শিক্ষাকর্তারা৷ বর্ধিত ছুটি ঘোষণা ঘিরে এবার প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন শিক্ষা মহলের একাংশ৷
কেননা, করোনার জেরে দু’দফায় স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে৷ ৩১ মার্চের পরিবর্তে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়েছে৷ তাতে পঠনপাঠনে সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন শিক্ষক মহলের একাংশ৷ কেননা, এপ্রিল মাসে রয়েছে একাধিক সামেটিভ পরীক্ষা৷ ফলে, ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি চললে এপ্রিলে বিভিন্ন ক্লাসের সামেটিভ পরীক্ষা কী হবে? তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা৷ একই সঙ্গে স্কুল পড়ুয়াদের মিড ডে মিলও বন্ধ থাকছে৷ আইসিডিএসের ক্ষেত্রে চাল-ডাল বিলি করার ব্যবস্থা করার ঘোষণা করা হলেও বাকি পড়ুয়াদের কী হবে? তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন৷
১৫ এপ্রিল ছুটি শেষ হতে না হতেই গ্রীষ্মাবকাশ পড়ছে ২৩ মে থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত৷ টানা ১৩ দিনের ছুটি, রবিবার বাদে৷ সেক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালীন ছুটি না কমানো সিলেবাস শেষ করা চ্যালেঞ্জ৷ একই সমস্যা তৈরি হয়েছে কলেজগুলিতেও৷ সেখানেও গ্রীষ্মকালীন ছুটি না কমালে সিলেবাস শেষ করা কঠিন৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্ধিত ছুটি ঘোষণা ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন শিক্ষক মহলের একাংশ৷
এবিষয়ে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘‘‘মুখমন্ত্রী আগামী ৩১ মার্চের পরিবর্তে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন৷ এতে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত ঘোষণা না করে ৩০ মার্চ পর্যন্ত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা প্রয়োজন ছিল৷ তারপর পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত নিলেই তো সবচেয়ে ভাল হত৷ পরিস্থিতি তেমন হলে নিশ্চয়ই এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে৷ হাতে তো যথেষ্ট সময় ছিল৷ এত তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত ঘোষণার কোনও যুক্তি আছে কি? আর সত্যিই যদি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে থাকে তাহলে উচ্চ মাধ্যমিক ও একাদশ শ্রেণির পরীক্ষা বন্ধ করা হচ্ছে না কেন?’’
আজ নবান্নে উচ্চ পর্যারে বৈঠকের পর সাংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মুখ্যমন্ত্রী৷ নবান্নে থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘করোনা রুখতে আমাদের কিছু আগাম সর্তকতা নিতে হয়েছে আমরা৷ স্কুল ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শুধু পরীক্ষা ছাড়া, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বা বোর্ডের পরীক্ষা হচ্ছে৷ আমরা ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছিলাম৷ কিন্তু এখন যেহেতু প্রত্যেকটা কেস পর্যবেক্ষণ করে আমরা যা দেখছি, চতুর্থ ও পঞ্চম সপ্তাহে এটা বেশি সমস্যা করছে৷ তাই আগাম সর্তকতা নেওয়ার জন্য আমরা এই ছুটিটা ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়ে দিলাম৷ আইসিডিএস সেন্টারগুলি আমরা ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি৷ আমরা করোনাভাইরাসে পয়সার জন্য যেতে অসুবিধা না হয়, আমরা ২০০ কোটি টাকার একটা ফান্ড তৈরি করেছি৷ আজ মিটিং একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে৷’’
স্কুল ছুটি থাকলে শিক্ষকরা কী করবেন? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘স্কুল-কলেজ আইসিডিএস বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে৷ শিক্ষকরা বাড়িতে গিয়ে কাজ করবেন৷ প্রশাসনিক যে কাজ আছে, তাঁরা তা করবেন৷ বেতন দেওয়া থেকে শুরু করে যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, তারা সেগুলি নিজেদের মতো করে নিজেরা করবেন৷’’ সরকারি কর্মীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন. ‘‘সরকারি কর্মীদের জন্য বলা হয়েছে, প্রত্যেকটা বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তারা যেন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করেন৷ হ্যান্ড স্যানিটাইজার করে তাঁরা যেন অফিসে ঢোকেন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজ করে অফিস থেকে বেরোবে৷’’