এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। প্রবল পরাক্রমশালী রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করছে ইউক্রেন। কিন্তু, এবার নিজের দেশেই প্রতিরোধের মুখে ভ্লাদিমির পুতিন। প্রতিপক্ষ ইউক্রেন নয়, রুশ প্রেসিডেন্টের চিন্তা বাড়িয়েছে নিজের দেশেরই পেশাদার যুদ্ধবাজরা। এতদিন অর্থের বিনিময়ে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়ছিল যে ভাড়াটে গোষ্ঠী, সেই ওয়াগনার গোষ্ঠীই এবার মস্কো থেকে পুতিন সরকারকে উৎখাতের ডাক দিল। এই আবহে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাশিয়ায়।
রাশিয়ার আধা সামরিক বাহিনী PMC Wagner, এটি মূলত একটি বেসরকারি সংস্থা। অর্থের বিনিময়ে রুশ সেনাবাহিনীতে যোদ্ধা সরবরাহ করে থাকে। রুশ আইনকানুন সে ভাবে কার্যকর হয় না এই সংস্থার উপর। সেই গোষ্ঠীই এবার ক্রেমলিন দখলের পথে এগোচ্ছে। অডিও বার্তা প্রকাশ করে মস্কোকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। তিনি বলেন, “আমরা এগোচ্ছি। একেবারে শেষ দেখে তবে ছাড়ব। মাঝখানে যা আসবে, সব গুঁড়িয়ে দেব।” ইয়েভজেনির দাবি অনুযায়ী, রাশিয়ার দক্ষিণের রোস্তভে ইতিমধ্যেই ঢুকে পড়েছে PMC Wagner। রোস্তভে সমস্ত সামরিক প্রতিষ্ঠানের দখল নিয়েছেন তারা। ২৫ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা ক্রেমলিনের দিকে এগোচ্ছে বলেও জানান তিনি। এই ঘোষণাই চিন্তায় ফেলে দিয়েছে রুশ প্রশাসনকে। পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রধানকে শান্তির বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে ক্রেমলিন। তবে আদৌও তাতে লাভ হবে কিনা, সেটা এখনও জানা যায়নি।
তবে, দেশের অভ্যন্তরে বিদ্রোহ দানা বাঁধতেই দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন ভ্লাদিমির পুতিন। সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্যে জাতির উদ্দেশে তিনি বলেন, রাশিয়ার সেনার বিরুদ্ধে যাঁরা যাঁরা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্যেকে বিশ্বাসঘাতক। রাশিয়াকে রক্ষা করতে সবকিছু করব। আমরা আরও শক্তিশালী হব। অর্থাৎ, ওয়াগনার গোষ্ঠীর চাপের সামনে রাশিয়া যে মাথানত করবে না তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট। রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি কোনওরকমভাবে গৃহযুদ্ধ বাঁধতে দেবেন না।
অন্যদিকে, রুশ সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, রাশিয়ার দ্বিতীয় শহরেরও দখল নিয়ে ফেলেছে ওয়ানগার গোষ্ঠীর ফাইটাররা। ভারোনেস শহরের দখল এখন পুতিনের পুরনো সহযোগীদের হাতে। মস্কোর দক্ষিণে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই শহর। এইরকম পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন সরকরি দফতরে আঁটোসাটো নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশাসনের তরফে। মস্কোর দক্ষিণের লিপেৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর ইগর আর্তামোনোভ সকলকে শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। রোস্তোভে স্থানীদের বাড়ির বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। ওয়াগনার গোষ্ঠীর প্রধান ইয়েভগেনির বিরুদ্ধে অপরাধ মামলা দায়ের করেছে রাশিয়ার নিরাপত্তা সংস্থা FSB। তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।