নয়াদিল্লি: ফের একবার চর্চায় চিন৷ পৃথিবীর ‘চামড়া’ ফুঁড়ে ৩২ হাজার ফুট গর্ত খোঁড়ার সিদ্ধান্ত সাড়া ফেলেছে গোটা বিশ্বে৷ চিন এই কাজে সফল হলে বদলে যাবে অনেক কিছু। ইতিমধ্যেই সেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে ড্রাগনের দেশ।
চিনের উত্তর-পশ্চিম অংশে বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে শিনজিয়াং প্রদেশ। এই অঞ্চলের গর্ভে লুকিয়ে রয়েছে খনিজ তেলের সম্ভার৷ সেখানেই এই গভীর গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু করেছে বেজিং। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে গর্ত খোঁড়ার কাজ৷ কিন্তু কেন এই উদ্যোগ? জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের হাত ধরে মহাকাশের পাশাপাশি পৃথিবীর গভীরেও প্রযুক্তির ছাপ ফেলার লক্ষ্য নিয়ে শি জিনপিং সরকার।
চিনা সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, শিনজিয়াঙে যে গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু হয়েছে, তা শেষ হবে ১০ হাজার মিটার গভীরে পৌঁছে। অর্থাৎ, পৃথিবীর বুকে ৩২ হাজার ৮০৮ ফুটের গর্ত খুঁড়বে বেজিং৷ যা পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টেরের উচ্চতার চেয়েও বেশি৷ এভারেস্টের উচ্চতা ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার (২৯০৩০ ফুট)। চিনের গর্ত খোঁড়ার কাজ সম্পন্ন হলে এর গভীরতা হবে ১০ হাজার মিটার৷
ঘন অন্ধবার ভেদ করে চিন যখন পৃথিবীর গহীনে প্রবেশ করার কাজ শুরু করছে, তখন মহাকাশ অভিযানেও নতুন নজির গড়ল সে দেশ৷ মঙ্গলবার সকালে গোবি মরুভূমি থেকে প্রথম বার অসামরিক নভোশ্চরদের নিয়ে মহাকাশে উড়ান দেয় চিনা মহাকাশযান।
রিপোর্ট অনুযায়ী, পৃথিবীর ত্বক ভেদ করে চিন যে গর্ত খোঁড়ার কাজ শুরু করেছে, তা অন্তত ১০টি মহাদেশীয় স্তর ভেদ করবে। মহাদেশীয় স্তর হল পাথরেরই বিভিন্ন আস্তরণ। চিনের খোঁড়া এই গর্ত একে একে ১০ টি মহাদেশীয় স্তর ভেদ করে পৌঁছে যাবে ভূত্বকের একেবারে শেষ স্তরে। সেখানে রয়েছে প্রায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ বছরের পুরনো পাথর৷ ক্রিটেশিয়াস যুগের পাথরে হাত বাড়ানোর যে পরিকল্পনা চিন নিয়েছে, সেই কাজ মোটেও সহজ নয় বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন চিনের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, এই কাজ অনেকটা দু’টি সরু স্টিলের কেবলের উপর দিয়ে বড় ট্রাক চালানোর মতো।
যদিও চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর কথায়, এই উদ্যোগ পৃথিবীর গভীরে অন্বেষণ অভিযান৷ ২০২১ সালে বিজ্ঞানীদের একটি সম্মেলনে গিয়ে এই প্রকল্পে উৎসাহ জুগিয়ে দেশের উন্নতি কামনা করেছিলেন তিনি।
কিন্তু কেন এই উদ্যোগ? তবে কি নতুন কোনও মতলব করছে বেজিং? গভীর অভিযানের আড়ালে কি কোনও গভীর অভিসন্ধি রয়েছে? না তেমন কিছু নয়৷ চিনা বিশেষজ্ঞদের কথায়, গভীর গর্ত খননের কাজ সফল হলে ভূগর্ভে সঞ্চিত ধাতু এবং শক্তির উৎস সম্পর্কে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। নানা খনিজ পদার্থের সম্ভার খুঁজে পাওয়া সম্ভব হবে৷ শুধু তাই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কেও আগাম তথ্য হাত আসবে। ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাতের সম্ভাবনা জানার প্রযুক্তিতে আরও উন্নত হতে পারবে চিন।
তবে চিনের খোঁড়া এই ৩২ হাজার ফুটের গর্তকে ‘পৃথিবীর গভীরতম’ বলা ঠিক হবে না। কারণ, গভীরতম গর্তের তকমা এখনও পর্যন্ত রয়েছে রাশিয়ার হাতে। পুতিনের দেশে ‘কোলা সুপারডিপ বোরহোল’-এর গভীরতা ১২ হাজার ২৬২ মিটার বা ৪০ হাজার ২৩০ ফুট। এই গর্ত খুঁড়তে প্রায় ২০ বছর সময় লাগে৷ ১৯৮৯ সালে গর্ত খোঁড়ার কাজ সম্পন্ন হয়৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>