স্কুল ছুটি সত্ত্বেও শিক্ষকদের বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর!

স্কুল ছুটি সত্ত্বেও শিক্ষকদের বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর!

কলকাতা: করোনা মোকাবিলায় ৩১ মার্চ অবধি রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার৷ শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে একথা বলা হয়৷ করোনা মোকাবিলায় কী উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য? এবিপি আনন্দকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

করোনা সংক্রমণ রুখতে শনিবার রাজ্য সরকারের তরফে একটি বিবৃতি জারি হয়েছে৷ ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকারি, বেসরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সমস্ত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা ১৬ মার্চ সোমবার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত  বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তবে এই আওতায় থাকছে না বোর্ড৷ নির্ধারিত সূচি মেনেই চলবে রাজ্যের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা৷ বন্ধ থাকবে স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটির পরীক্ষা৷ বেসরকারি স্কুল গুলিও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷

কোন ভাবনা থেকে এই নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য সরকার? এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই৷ এটা একটা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ৷ যাতে কাউকে কোনও রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়৷ তিনি আরও বলেন, মনে রাখবেন সর্দি বা কাশি মানেই কোনও ভাইরাস আক্রমণ করছে, এটা ভাবা ঠিক নয়৷ সব সর্দি-কাশি-জ্বর করোনা নয়৷ তবে শ্বাসকষ্ট বা জ্বর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷ করোনার জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে সমস্ত খেলাধুলাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ শুক্রবার খেলাধুলো নিয়ে আলোচনা সেরেছে রাজ্য৷ আজ, স্কুলগুলির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছোটদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে অনেক বেশি৷ বাচ্চার এতটাই অবুঝ হয় যে, হাত মোছার টিস্যু দিলেও তারা সেটা সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারে না৷  তাই সতর্ক থাকতেই হবে৷ পয়লা এপ্রিল থেকে স্কুল খোলার কথা থাকলেও, ৩০ মার্চ ফের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া  হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী৷ করোনা প্রতিরোধে এর আগে ছ’টি রাজ্য স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ হু, রাষ্ট্রসংঘ ও কেন্দ্রীয় সরকারের সতর্কবার্তা মেনে এই সিদ্ধান্ত। তবে, স্কুল ছুটি থাকলেও শিক্ষকদের বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

সম্প্রতি নয়ডাতে একটি বাচ্চার বাবা ইতালি থেকে করোনা সংক্রমিত হন৷ দেশে ফেরার পর তাঁর থেকে ওই স্কুলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে৷ এই পরিস্থিতি দেখলে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এখন বিধানসভার অধিবেশন চলছে৷ আমাদের রাজ্যে বিধানসভা আকারে একটু ছোট৷ সেই তুলনায় ভিড় হয় অনেক বেশি৷ তবে বিধানসভা চলবে কিনা, এই ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেবেন স্পিকার৷

এদিকে রাজারহাটে দুটি জায়গায় আইসোলেশন ওয়ার্ডের বন্দোবস্ত করা হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে৷ যেখানে ৩০০-৪০০ জন রোগীকে রাখা সম্ভব হবে৷ আরও একটি বাড়ির খোঁজ চলছে৷ খোঁজ মিললে আইসোলেশন ওয়ার্ডের সংখ্যা আরও বাড়ানো সম্ভব হবে বলেই জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ জেলায় জেলায় আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি৷ এদিকে প্রশ্ন উঠেছে স্কুল ছুটি হলেও কেন বন্ধ হবে না মেলা? আগামী সপ্তাহ থেকে মতুয়া মেলা ঠাকুরনগর ও চৈত্র মাসের তারকেশ্বর মেলা শুরু হচ্ছে৷ সংক্রমণ ঠেকাতে ওই মেলাগুলোও পিছিয়ে দেওয়া হোক বলে বিভিন্ন মহলে দাবি উঠেছে৷  

করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর দাওয়াই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন৷ বেশি করে জল খান৷ শ্বাস কষ্ট এবং জ্বর হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান৷ ঘণ্টায় ঘন্টায় হাত পরিষ্কার করুন এবং পাঁচ মিটার দূরত্ব রেখে কথা বলুন৷ যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা বন্ধ করুন৷ বাংলা সুরক্ষিত আছে৷ শুধু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 + twelve =