বাঁকুড়া: বিধানসভা নির্বাচনের আগে জেলা সফর শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানকার প্রশাসনিক কাজকর্ম খতিয়ে দেখার পাশাপাশি একাধিক প্রকল্প ঘোষণাও করেন তিনি। সেই সভামঞ্চ থেকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বঙ্গ সফরে বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ থেকে শুরু করে মূর্তিতে মাল্যদানকে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ৪ নভেম্বর কলতাতা যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা নরেন্দ্র মোদির প্রধান সেনাপতি অমিত শাহ। এবারের সফরে সাংগঠিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পাশাপাশি কালীঘাটে পুজো দেন এবং বাঁকুড়ায় আদিবাসী এবং উত্তর ২৪ পরগনার মতুয়া সম্প্রদায়ের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সারেন তিনি। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে অমিত শাহের মধ্যাহ্নভোজকে কটাক্ষ করেন। অভিযোগ করেন, বাইরে থেকে রান্নার জন্য ব্রাহ্মণ নিয়ে গিয়ে রান্না করা হয়েছিল, বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতে শুধুমাত্র বসে খেয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেখানো হয়েছে তরকারি কাটা হচ্ছে, কিন্তু সেই তরকারি খায়নি, কোনও তরকারিতেই ধনেপাতা দেওয়া হয়নি, বাঁধাকপি কাটা হচ্ছে দেখানো হলেও তা খায়নি। বাসমতী চাল, পোস্তোর বড়া ছিল খাবারের তালিকায়।” এরপরেই মূর্তিতে মাল্যদানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য সফরে এসে সেখানে একটি মূর্তিতে বীরসা মুণ্ডার মূর্তি বলে মাল্যদান করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যদিও বিরসা মুণ্ডার মূর্তি ভেবে যেটিতে মালা দেওয়া হয়, পরে জানা যায়, সেটি বিরসা মূর্তি নয়, কোনও শিকারীর মূর্তি। যদিও নিজেদের দাবিতে অনড় থাকে বিজেপি। পরে বিজেপির রাজ্য নেতারা সাফাই দিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেছেন, তখন সেটি বিরসা মুণ্ডারই মূর্তি। যদিও তাতেও বিতর্ক থামেনি। এদিনের সভা থেকে তাকেই কটাক্ষ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আপনারা বলেছেন, ওটা বীরসা মুণ্ডার মূর্তি নয়, ওটা একটা শিকারীর মূর্তি। আমি শিকারীকেও সম্মান জানাই,সেও আমার ভাই। কিন্তু তুমি মিথ্যা কথা বলছ কেন? তুমি বিদ্যাসাগরের মূর্তি গিয়ে ভেঙ্গে আসবে, তুমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে অন্য একজনের গলায় মালা দিয়ে আসবে. বীরসা মুণ্ডার মূর্তি বলে আরেকজনার গলায় মালা দিয়ে আসবে, সেটা হবে না।” তিনি আরও বলেন, “সরকারক বলব না…..যারা আমাদের মা মাটি মানুষ করেন (পড়ুন তৃণমূল কংগ্রেস) তাঁরা বলেছেন বীরসা মুণ্ডার মূর্তি ওখানে তৈরি হবে৷” রাজ্য সরকারের তরফে বীরসা মুণ্ডার জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা করা হবে বলে এধিন জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার কারণও ব্যাখা করেন তিনি। তাঁর কথায়, “তাঁকে সম্মান জানিয়ে এই কাজটা আমরা করতে চাই৷”
বাঁকুড়া জেলায় ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে ১২ আসনের মধ্যে ৮টিতে জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও একটি আসনও পায়নি বিজেপি। তবে লোকসভা নির্বাচনে দুটি আসনই ছিনিয়ে নেয় পদ্ম শিবির। অন্যদিকে রাজ্যের ৪২ লোকসভা আসনের মধ্যে ১৮টিতে পদ্মফুল ফোটে। ফলে চিন্তায় রাজ্যের শাসক শিবির। সেখানকার রুক্ষ মাটিতে ঘাসফুলের চেয়ে পদ্মেরই যে বাড়বাড়ন্ত হচ্ছে তা বিলক্ষণ বুঝেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই জন্য বাঁকুড়ার আদিবাসী সমাজকে কাছে টানতে এই ঘোষণা বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের।