২০১৯ এর ব্যর্থতা ভোলাবে ২০২৩? চন্দ্রযান ২-এর চেয়ে চন্দ্রযান ৩ কতটা আলাদা?

২০১৯ এর ব্যর্থতা ভোলাবে ২০২৩? চন্দ্রযান ২-এর চেয়ে চন্দ্রযান ৩ কতটা আলাদা?

বেঙ্গালুরু: মুখ থুবড়ে পড়েছিল চন্দ্রযান ২-এর অভিযান৷ সেই ‘ব্যর্থতা’ থেকে শিক্ষা নিয়েই নতুন উদ্যমে শুরু হয় মিশন চন্দ্রযান ৩-এর সফর৷ চার বছর আগের দ্বিতীয় চন্দ্রযান মিশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চন্দ্রযান ৩-এ বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানীরা। এ প্রসঙ্গে ইসরোর চেয়ারম্যন এস সোমনাথ জানান, চন্দ্রযান ২-এ কী কী ত্রুটি হয়েছিল, তা গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর সেই ত্রুটির ভিত্তিতে চন্দ্রযান-৩ নিয়ে এগিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা। পাশাপাশি সম্ভাব্য ত্রুটি নিয়েও বিবেচনা করা হয়েছে। যাতে ২০১৯ সালে ইসরো সহ গোটা ভারতবাসীর চোখে যে স্বপ্নভঙ্গের জল এসেছিল, ২০২৩ এ তা না হয়৷  দেখা যাক চন্দ্রযান ২-এর সঙ্গে চন্দ্রযান ৩-এর কী কী পার্থক্য রয়েছে-

মূল মিশনের ব্লু-প্রিন্ট পরিবর্তন
 

চন্দ্রযান-৩ মিশনের মূল পদ্ধতি পরিবর্তিত হয়েছে৷ ভারতীয় মহাকাশ সংস্থার চেয়ারম্যান জানিয়েছেন,  সাফল্যকে পাখির চোখ করে দ্বিতীয় চন্দ্রযান মিশনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এবার সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটেছে ইসরো। কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে, কোথায় ধাক্কা আসতে পারে, সেই বিষয়গুলি বিচার করে তৃতীয় চন্দ্রযান মিশনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ  পরিকল্পনা মাফিক মিশন না এগোলে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে, সে বিষয়ে আগেভাগেই পরিকল্পনা করে রেখেছে ভারতীয় মহাকাশ সংস্থা।

ইসরোর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘‘চন্দ্রযান ২-এর ক্ষেত্রে এসাকসেস-বেসড পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল , এবার ফেলিয়োর-বেসড প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের প্রাথমিক পরিকল্পনা যদি সফল না হয়, তারপরও কীভাবে আমরা নিজেদের মিশন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব, সেই ভাবনাকে সামনে রেখেই আমরা এগিয়েছি।’ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বিভিন্নরকম ত্রুটি যেমন- সেনসরের ত্রুটি, ইঞ্জিনের গোলযোগ, অ্যালগোরিদমের গোলমাল, হিসাবে ভুল, এই সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেছি৷ নির্দিষ্ট গতিতে অবতরণের ক্ষেত্রে যা যা ত্রুটি হতে পারে, সেই সব দিকে আমাদের নজর রয়েছে।’’

 

 

ল্যান্ডিংয়ের জায়গা আরও বড় করা হয়েছে-

 

এবার চাঁদে অবতরণের জন্য যে জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে,  তার পরিধি গতবারের তুলনায় অনেকটা বেশি৷ গতবার চাঁদে অবতরণের জন্য ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-র কাছে মাত্র ৫০০ মিটার জায়গা ছিল। এবার সেটা বাড়িয়ে ৪ কিলোমিটার করা হয়েছে।
 

 

আরও মজবুত হচ্ছে ল্যান্ডারের ‘পা’
 

চাঁদে অবতরণের জন্য ল্যান্ডারের ‘পা’ আরও মজবুত করা হয়েছে। যাতে অবতরণের সময় দ্বিতীয় চন্দ্রযানের চেয়েও আরও বেশি বেগ সইতে পারে। ইসরোর অপর এক বিজ্ঞানী জানান, প্রতি সেকেন্ডে দু’মিটার বেগে ল্যান্ডারের অবতরণ করার বিষয়টি সুরক্ষিত বলা যেতে পারে। তার পরেও পরিস্থিতি যদি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে গতিবেগ বাড়িয়ে ল্যান্ডার অবতরণ করানো যেতেই পারবে।

ল্যান্ডারে বেশি জ্বালানি রাখা হয়েছে

তৃতীয় চন্দ্রযান মিশনের ল্যান্ডারে বাড়তি জ্বালানি রাখা হয়েছে। যাতে অবতরণের সময় কোনওরকম সমস্যা হলে আরও কিছুক্ষণ ঘুরপাক খেয়ে উপযুক্ত সময় চাঁদের মাটিতে নামতে পারে ল্যান্ডার। 

ইঞ্জিনের সংখ্যা কমিয়ে উন্নত হয়েছে সফটওয়্যার
 

চন্দ্রযান ২-এ মোট পাঁচটি ইঞ্জিন ছিল। চন্দ্রযান ৩-এ রয়েছে চারটি ইঞ্জিন৷ উন্নত করা হয়েছে সফটওয়্যার৷
 

অবতরণের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় চন্দ্রযান মিশনের মদত
 

ব্যর্থ হয়েছিল চন্দ্রযান-২। তবে তৃতীয় চন্দ্রযান মিশনের সাফল্য পেলে তাতে চন্দ্রযান ২-এরও অবদান থাকবে। কারণ চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার যখন চাঁদের মাটি ছোঁবে, তখন শুধুমাত্র নিজের তোলা ছবির উপর নির্ভর করবে না। সঠিক স্থান বোঝার জন্য চন্দ্রযান ২-এর তোলা ছবি ব্যবহার করবে চন্দ্রযান ৩-র ল্যান্ডার।

বাড়তি সোলার প্যানেল
এবার ল্যান্ডারে আরও বেশি সংখ্যক সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। ইসরোর প্রধান জানিয়েছেন, যেভাবেই ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে অবতরণ করুক না কেন, তা আরও বেশি শক্তি তৈরি করতে পারবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

three × five =