জিএসটি’র ঘাটতি মেটানোর দায় নেবে না কেন্দ্র, সবই ঈশ্বরের হাত! ঘোষণা সীতারমনের

পণ্য ও পরিষেবা করের ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব নেবে না কেন্দ্র।  ক্ষতিপূরণ মেটাতে রাজ্যগুলিকেই ধার নিতে হবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্র শুধুমাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ধার নেওয়ার প্রক্রিয়া সরল করতে পারে। সীতারমন এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসাবে করোনার জেরে কেন্দ্রের রাজস্ব ঘাটতিকেই চিহ্নিত করেছেন।

 

নয়াদিল্লি: একাধিক রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন তাঁর অবস্থান জানিয়েছেন৷ পণ্য ও পরিষেবা করের ক্ষতিপূরণের দায়িত্ব নেবে না কেন্দ্র।  ক্ষতিপূরণ মেটাতে রাজ্যগুলিকে ধার নিতে হবে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে কেন্দ্র শুধুমাত্র রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ধার নেওয়ার প্রক্রিয়া সরল করতে পারে। সীতারমন এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসাবে করোনার জেরে কেন্দ্রের রাজস্ব ঘাটতিকেই চিহ্নিত করেছে বলে মত পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের৷

এদিকে জিএসটি আইন অনুযায়ী, ১৪ শতাংশের চেয়ে কম কর আদায়ের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময়কালে সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা কেন্দ্রের৷ ২০১৭ তে চালু এই আইন ২০২২ সাল পর্যন্ত কার্যকরি থাকার কথা। ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে আইনি নিশ্চয়তার কারণে রাজ্যগুলি তাদের পরোক্ষ কর ছেড়ে দিয়েছিল। তাই রাজস্ব আদায়ে লোকসান হলে তা পুষিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রের৷ কিন্তু, করোনা-কালে সেই ক্ষতিপূরণ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্রক৷

সূত্রের খবর, কেরালা সহ একাধিক রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা  বৈঠকে সরব হয়েছিলেন সীতারমনের বিরুদ্ধে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখান কেরালা সহ, দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, পাঞ্জাব, ঝাড়খণ্ডের অর্থমন্ত্রীরা। কেরালার অর্থ মন্ত্রী টমাস আইজাক জানিয়েছেন, লোকসান পুষিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রের। অথচ ঋণ নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে রাজ্যগুলির ওপর। অথচ এই যুক্তিকে নাকচ করে দিয়ে সীতারমন জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী কেন্দ্রের এমন বাধ্যবাধকতা নেই। বিরোধীদের কথায়, নতুন অর্থবর্ষ শুরু হওয়ার পর এপ্রিল থেকে জুলাই, এই চারমাসে কেন্দ্রের থেকে অনুদান পায়নি রাজ্যগুলি। বৈঠকের পর কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে বেজায় চটে গিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের অর্থ মন্ত্রীরা। কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিব অজয়ভূষণ পাণ্ডা জানিয়েছেন, চলতি অর্থবর্ষে কর আদায়ে ঘাটতি পৌঁছাতে পারে ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৭ হাজার কোটি টাকা জিএসটি প্রয়োগের সঙ্গে জড়িত হলেও বাকি পুরোটাই করোনা মহামারীর জন্য ঘটছে।

অন্যদিকে সীতারমনের কথায়, এদিন বৈঠকে দু’টি বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে সাত দিনের সময়ও দেওয়া হয়েছে অভিমত জানানোর জন্য। প্রথম বিকল্প হিসাবে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘বিশেষ জানালা’ আইন অনুযায়ী রাজ্যগুলি ৯৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে। সেক্ষেত্রে সুদের হার সহজ করার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। এই ঋণ পাঁচ বছরের মেয়াদে দেওয়া হবে, এরপর সেস তহবিলের পক্ষ থেকে তা মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্যগুলিকে। পাশাপাশি দ্বিতীয় বিকল্প হিসাবে কেন্দ্র তরফে বলা হয়েছে, লোকসানের ২ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই ঋণ হিসাবে নিতে পারে রাজ্যগুলি। পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের জন্য এই ঋণের ব্যবস্থা কেবলমাত্র চলতি অর্থবর্ষেই কার্যকরি থাকবে, একথাও জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রী।

এদিকে কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিব স্বীকার করেছেন, এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষেও শ্লথতার কারণে তহবিলে ৭০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি হয়েছিল। ক্ষতিপূরণ তহবিলের উদ্বৃত্ত দিয়ে সেই ঘাটতি মেটানো হয়েছিল। অর্থমন্ত্রীর কথায় 'ঈশ্বরের হাত' করোনা মহামারী কিন্তু আগের অর্থবর্ষে ছিল না। অন্যদিকে, চলতি বছরে মহামারীর মধ্যেও পেট্রোল, ডিজেলের কর চড়া হারে বাড়িয়েছে মোদী সরকার। ফলে একপ্রকার জোর করেই এই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজ্যগুলির ওপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − eleven =