সিনেমা হোক বা বাস্তব, কলেজ জীবনের প্রেম নিয়ে নস্ট্যালজিয়া জড়িয়ে রয়েছে কম বেশি সবার। বলিউডের মহব্বতে শিখিয়েছিল শিকল ভাঙার জয়গান। অনুশাসন, পরম্পরার নামে যে আবেগকে বেঁধে রাখা যায় না শিখিয়েছিল ‘গুরুকুলের’ মিউজিক টিচার রাজ আরিয়ান মালহত্রার চরিত্র। কিন্তু, সেই প্রেমেই এবার বাদ সাধল কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে প্রেম করলেই চলছে ‘ধরপাকড়’! এমনকি প্রেমিক-প্রেমিকার অভিভাবকদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেকে পাঠানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ আনল পড়ুয়ারা। গত শুক্রবার এমন অভিযোগ সামনে এসেছে।
পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে প্রেম করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে। তাঁদের ডেকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। ঘনিষ্ঠভাবে কথা বললে কর্তৃপক্ষের চিঠির মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকী কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে কাউন্সেলিং করানোর অভিযোগও তুলেছে পড়ুয়ারা। শহরের নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ সামনে আসতেই জোর চর্চা শুরু হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের এহেন আচরণে ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা। কমপক্ষে ৪ জুটিকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ‘ডিসিপ্লিনারি কমিটির’ ৮-৯ জন সদস্যের সামনে নিজেদের আচরণের কারণও ব্যাখ্যা করতে হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে এস এফ আই। সেখানে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। সংগঠনের তরফে ঋষভ সাহা বলেন, আমরা নীতি পুলিশের বিরুদ্ধে। কোন আচরণ শালীন, কোনটা নয় সেটা কর্তৃপক্ষ ঠিক করছেন কীভাবে? ক্যাম্পাসে তো মিটিং, মিছিল, জমায়েত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও বিধি নিষেধ চাপাতে চাইছেন কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, তাঁদের ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে কর্তৃপক্ষ। হেনস্থার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। যদিও পড়ুয়াদের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, ক্যাম্পাসে ‘নীতি পুলিশি’-র যে অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হচ্ছে তা মোটেও সত্যি নয়। ‘অত্যন্ত ব্যক্তিগত ঘটনা ঘটছে ক্যাম্পাসে। সেই কারণে পড়ুয়াদের সতর্ক করতে বিষয়টি তাঁদের অভিভাবকদের ডেকে জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, বেশ কয়েকদিন ধরে কিছু পড়ুয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে প্রকাশ্যে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখা গিয়েছে। সেই কারণে কর্তৃপক্ষের তরফে ‘ধরপাকড়’ চালানো হচ্ছে। ছাত্র-অভিভাবকদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। পড়ুয়াদের স্বার্থেই এই কড়াকড়ি, বলে দাবি কর্তৃপক্ষের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ ও ছাত্র সংগঠনগুলির দাবি, আগামী দিনে বিষয়টি বন্ধ না হলে তাঁরা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে সামিল হবে। এমনকী এই প্রতিবাদ দিকে দিকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও জানায় তাঁরা। অতীতে যে বিশ্ববিদ্যালয় গোটা দেশকে দিশা দেখিয়েছে সেখানে কোথাও ভুল বোঝাবুঝি থাকুক, চান না বঙ্গবাসী। সকলেই চান, আগের মতোই এগিয়ে চলুক প্রেসিডেন্সি। সেখানে পড়াশোনাও চলুক, চলুক সবুজ প্রেমের জয়গান…শিক্ষার পীঠস্থানকে নিয়ে আবারও আগের মতই গর্ব করুক বাঙালী।