রুক্ষ অ্যারিজোনায় এক টুকরো ‘কালিম্পং’! মরুপ্রান্তরে প্রজাপতি কলোনি

রুক্ষ অ্যারিজোনায় এক টুকরো ‘কালিম্পং’! মরুপ্রান্তরে প্রজাপতি কলোনি

নিউ ইয়র্ক:  আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিমে পর্বত ঘেরা রাজ্য অ্যারিজোনা৷ দক্ষিণ অ্যারিজোনা মূলত এর উষ্ণ আবহাওয়ার জন্য পরিচিত৷ এখানে গ্রীষ্ণ যতটা প্রখর, ততটাই হালকা শীত৷ সেই শুষ্ক, রুক্ষ, মরুপ্রান্তরের মাঝেই মিলল কালিম্পংয়ের হিমেল আবেশ। না, এটা কোনও কল্প কাহিনীর প্লট নয়৷ এমন ভাবনার নেপথ্যে রয়েছে এক কাঁটাগাছের নার্সারি!

অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরে মরুভূমির মাঝে গড়ে ওঠা বটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এমন জায়গা। লাল পাথুরে টিলা সদৃশ পাপাগোকে বাঁ হাতে রেখে কিছুটা এগিয়ে ছোট বাঁক ঘুরতেই সামনে উঁচু উঁচু সান পেড্রো ক্যাকটাস। মাঝে মধ্যে দেখা মেলে প্রিকলি পিয়ার ক্যাকটাস ঝোপের। চারাগুলি ঘেরা রয়েছ ছোট নেটের জাল দিয়ে৷ যা মনে করায় কালিম্পংয়ের পাইন ভিউ নার্সারির কথা। সেখানে ১৫০০-এর বেশি প্রজাতি থাকলেও, মার্কিন মুলুকের এই বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তরে সংখ্যাটা অনেকটাই কম। আর সেই ঝোপের মাঝে উড়ছে প্রজাপতির ঝাঁক। হ্যাঁ, এই রুক্ষ মরুভূমির মাঝেই। তার খানিক দূরে ছুটে বেরাচ্ছে খরগোশের পাল, মরু-ইঁদুর। কোথাও আবার উড়ে যাচ্ছে পাখির ঝাঁক। যেন কোনও শিল্পীর হাতে আঁকা ক্যানভাস৷ যা দেখলেই ঘোর লাগে। কংক্রিটের জালে মোড়া শহরের এত কাছে এমন প্রাকৃতিক শোভা! অনেকেই হয়তো কল্পনা করতে পারবেন না৷ 

নানা প্রজাতির ছোট, বড়, মাঝারি ক্যাকটাসে ঘেরা পথ বেয়ে যত এগনো যায়, তাতই বাড়ে প্রজাপতির সংখ্যা। অনেকটা হায়দরাবাদের রামোজি ফিল্ম সিটির বাটারফ্লাই পার্কের মতো। চারিদিকে শুধুই রঙের খেলা। পার্ক রেঞ্জারের কথায়, ‘অ্যারিজোনায় ২৫০টিরও বেশি প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। গত চার দশকে আবহাওয়া বিস্তর পরিবর্তন ঘটেছে৷ শুষ্কতা বৃদ্ধি পেয়েছে ভয়ঙ্করভাবে। তার উপর নগরায়নের জেরে কোটঠাসা প্রজাপতিরা৷ হু হু করে কমছে এই রঙিন পতঙ্গের সংখ্যা। তারই মধ্যে সেন্ট্রাল ফিনিক্সের এই বটানিক্যাল গার্ডেন হয়ে উঠেছে প্রজাপতিকুলের নিরাপদ আশ্রয়। প্রজাপতিদের রিফিউজি কলোনি।’

এ প্রসঙ্গে অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানালেন, সম্প্রতি টাকসন, ফিনিক্স, এল পাসো, অ্যালবুকোয়েরকিউ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার পাম মরুভূমি শহরজুড়ে একটি গবেষণা করা হয়৷ তাতে উঠে এসেছে অবাক করা তথ্য। শহরের মাঝে সবুজ কিছু অংশ হয়ে উঠতে পারে প্রজাপতিদের বেঁচে থাকার জায়গা৷ বিষয়টা আশ্চর্যজনক হলেও তেমন প্রমাণ মিলেছে। এমনই জীব বৈচিত্র্যের প্রাণকেন্দ্র ফিনিক্সের এই বটানিক্যাল গার্ডেন। 

এই প্রজাপতি কলোনির ছোঁয়া স্থানীয় জীবনেও পড়েছে৷ চোখের সামনে এত প্রজাপতি দেখে আনন্দে মাতোয়ারা শিশুরা। অনেকে তো আবার প্রজাপতি পতে বাড়ির সামনে বাগান বানাতেও প্রস্তুত৷ সব মিলিয়ে উষ্ণ অ্যারিজোনায় লেগেছে রঙের ছোঁয়া৷