ঢাকা: বাতাসে বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে কার্বন ডাই অক্সাইড৷ বাতাসে এই বিষ-বাষ্পের মাত্রা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা৷ বায়ু দূষণের হার বিপদসীমা ছাড়ালে বিশ্বউষ্ণায়নের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে জীবজগতের উপরে৷ এর থেকে রেহাই পাবে না বাংলাদেশও। তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ৷ শহর থেকে গ্রাম, বইছে উষ্ণ হাওয়ার স্রোত। তাপপ্রবাহে নাকাল রাজধানী ঢাকাও। কী ভাবে চরম তাপমাত্রা থেকে ক্রংক্রিকেট শহর ঢাকাকে রক্ষা করা যায়? সেই দায়িত্বই তুলে দেওয়া হল বুশরা আফরিনের হাতে। ঢাকার ‘চিফ হিট অফিসার’ তিনি। বাংলায় তর্জমা করলে হয় তাপনিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা। তাঁর কাজ তাপ নিয়ন্ত্রণ হলেও, কম তাপ ছড়ান না স্বয়ং বুশরা। সেই আঁচেই পুড়ছে নেটপাড়া।
এত দিন আমেরিকার মায়ামি, লস অ্যাঞ্জেলস, গ্রিসের আথেন্স, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন এবং আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ করা হয়েছে। এ বার সেই জুতোয় পা গলাল বাংলাদেশেও৷ আর এই পদে বুশরাই প্রথম।
বুশরার বাবা আতিকুল ইসলাম ঢাকার উত্তর পুরসভার মেয়র। পাশাপাশি পোশাকেরও ব্যবসা রয়েছে তাঁর। বুশরা বড় হয়েছেন ঢাকাতেই৷ এর পর পড়াশোনার জন্য চলে যান কানাডায়৷ সেখানে গ্লোবাল ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ নিয়ে তাঁর পড়াশোনা। দেশে ফিরে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ শুরু করেন। এ বার ‘চিফ হিট অফিসার’ পদে যোগ দিলেন তিনি।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দিন দিন তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ করা হয়। এঁদের মূল কাজ তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। এর পাশাপাশি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পও গ্রহণ করে থাকেন ‘চিফ হিট অফিসার’রা। এর মধ্যে রয়েছে বৃক্ষরোপণ, ছায়া রয়েছে এমন স্থানের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি। তাপের কারণে যে সব রোগ হয়, তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করে থাকেন ‘চিফ হিট অফিসার’রা৷ এই বিষয়ে সরকারের সবকটি দফতরের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন এই আধিকারিক।
দেশের সব শহরের তাপমাত্রা সমান হয় না। যে শহরে অধিক কলকারখানা, দফতর, শপিং মল রয়েছে, সেখানে বাতানুকূল যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে তাপমাত্রাও বেশি থাকে। এ সব এলাকায় গাছপালাও কম দেখা যায়। এই সব আরবান হিট আইল্যান্ড বা উচ্চ তাপমাত্রা বিশিষ্ট অঞ্চলের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকেন ‘চিফ হিট অফিসার’।
নিজের কাজ প্রসঙ্গে বুশরা বলেন, ‘‘হিট মেসেজিং নিয়েই আমাদের কাজ৷ এ বিষে মানুষকে সচেতন করতে হবে। কারণ সচেতনতাই প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। বয়স্ক, শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং যাঁরা শারীরিক ভাবে অসুস্থ, তাঁরা যেন নিরাপদে থাকেন। এগুলো আমাদের দেশের মানুষ জানে না।’’
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমেরিকার একটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করবে ঢাকা উত্তর পুরসভা। অ্যাড্রিয়েন আর্শট-রকফেলার ফাউন্ডেশন রেজিলিয়েন্স সেন্টারের সঙ্গে ইতিমধ্যে চুক্তি সাক্ষর করেছে ঢাকা। এই চুক্তি সাক্ষরের পরেই বুশরাকে ‘চিফ হিট অফিসার’ পদে নিয়োগের কথা ঘোষণা করে প্রশাসন। যদিও বুশরার বেতন-সহ যাবতীয় ভাতা দেবে আমেরিকার ওই সংস্থা৷
চলতি বছর এপ্রিল মাসে ২৬ দিন ঢাকায় তাপপ্রবাহ চলেছে। এর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। বিডি নিউজ ২৪-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বুশরা বলেন, ‘‘তীব্র তাপপ্রবাহের একটা অদৃশ্য ঝুঁকি রয়েছে। এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে। বিশ্বের বহু দেশ মানুষকে অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে সাবধান করেছে। তাপপ্রবাহের মধ্যে বাইরে গেলে কী করতে হবে, সে পরামর্শ দিয়েছে৷ বাংলাদেশে এখনও তা হয়নি।’’ মহিলাদের স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বুশরা৷
বুশরার কথায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় ছোট ছোট বন কী ভাবে তৈরি করা যাবে, সে বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। তাপপ্রবাহের সমস্যার নানা পথ খুঁজে বার করতে হবে। কী করব, কী ভাবে করব, তার জন্য গড়ো তোলা হবে টাস্ক ফোর্স।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>