lok sabha
কলকাতা: ক্যালেন্ডারে এখন জানুয়ারি মাস৷ দেশজুড়ে শীতের আমেজ৷ তবে পারদ চড়ছে রাজনীতির অন্দরমহলে৷ আসন্ন লোকসভা ভোটকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই বইতে শুরু করেছে গরম হাওয়া৷ রাজনৈতিক দলগুলি তৈরি করে ফেলেছে দিল্লি দখলের নীল নকশা৷ দিল্লির তখত ছিনিয়ে নিতে এখন থেকেই ভোট ময়দানে ঝাঁপাতে শুরু করেছে বিজেপি-অবিজেপি দলগুলি৷ ভোট আবহে দেশ জুড়ে একটাই প্রশ্ন, ‘এই বার দিল্লি কার?’ সেই উত্তর অবশ্য সময়ই দেবে৷ তবে লড়াইয়ে কোনও ফাঁক রাখতে চাননা রাজনৈতিক নেতারা৷
লোকসভা নির্বাচনে হ্যাটট্রিক করতে ইতিমধ্যেই স্লোগান তৈরি করে ফেলেছে গেরুয়া শিবির৷ তাদের স্লোগান- ‘অব কি বার ৪০০ পার’৷ এ বিষয়ে নীরবে ধোঁয়া দিয়ে চলেছে বিজেপির শীর্ষ মহলও৷ তাদের লক্ষ্য- মানুষের মনে এই সংখ্যাটাকে বিশ্বাসে পরিণত করা। তার উপর সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল বাড়তি অক্সিজেন জুগিয়েছে পদ্মবাহিনীকে৷ কিন্তু বাস্তব চিত্রটা ঠিক কী? লড়াই কি সত্যই বিজেপি’র কাছে বায়ে হাত কী খেল? দলের অন্দরের খবর, তিসরি বার মোদী সরকার বলে গলা ফাটালেও, সংশয় কিন্তু রয়েছে৷ শুধুমাত্র যে আসনগুলিকে ‘দুর্বল’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলি নিয়েই দুশ্চিন্তা নয়। গতবারের জেতা বেশ কিছু লোকসভা কেন্দ্র নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে বৈকি। রাজ্য স্তরের নেতাদের কাছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বার্তা, গতবারের জেতা আসনগুলির উপর বাড়তি নজর দিতে হবে। কোনওভাবে যেন জেতা আসন ফসকে না যায়।
পরিস্থিতি যে ইঙ্গিত দিচ্ছে তাতে আগামী মার্চ মাসেই হয়তো ভোট ঘোষণা হয়ে যাবে৷ সেক্ষেত্রে হাতে আর মাত্র দু’মাস। লক্ষ্য পূরণে লাগাতার রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। কখনও একসঙ্গে, কখনও আবার আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা সারবেন তাঁরা। দলকে চাগাতে দেবেন দাওয়াই৷ তবে দলের তরফে সাফ বার্তা, বুথ স্তর, অর্থাৎ একেবারে তৃণমূল স্তরে পৌঁছে মানুষের আস্থা ও সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সেই কাজ করার জন্য যে সাংগঠনিক পরিকাঠানোর প্রয়োজন, সেটা সব রাজ্যে বিজেপির আছে তো? গোবলয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই বটে। তবে দুশ্চিন্তা থাকবে দক্ষিণ ভারত এবং অবশ্যই বাংলাকে নিয়ে। গত লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু চার বছর পর পরিস্থিতি কেমন? এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলায় বুথ সশক্তিকরণ অভিযান চালিয়ে প্রকাশ্যে উঠে এসেছে হতশ্রী দশা৷ বঙ্গ নেতাদের হিসেব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে এ রাজ্যে মাত্র ৪০ শতাংশ বুথে পার্টির সক্রিয় কর্মী রয়েছেন। অর্থাৎ, বাংলার ৬০ শতাংশ বুথেই গেরুয়া শিবিরের উপস্থিতি কার্যত ‘শূন্য’।
বিজেপির কেন্দ্রীয় হিসেব অনুযায়ী, বাংলায় ২৪টি আসন দুর্বল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাস্তরে খোঁজখবর নিয়ে জানা গিয়েছে, বাস্তবটা এর চেয়ে অনেকটাই আলাদা। কারণ, উত্তরবঙ্গকে শক্ত ঘাঁটি হিসেবে ধরে নিয়েই এই তালিকা তৈরি করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোট এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর সেখানকার ছবিটাও অনেকাংশে বদলে গিয়েছে। শুধু বাংলা নয়, সারা দেশেই এমন বেশ কয়েকটি আসন রয়েছে যেগুলি আপাত-শক্তিশালী কেন্দ্র বলে চিহ্নিত। বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র ২০০ আসনের ‘গ্রাউন্ড রিপোর্ট’ পুরোপুরি ফ্লপ হওয়ার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন অমিত শাহ। এবার আর সেই ছবির পুনরাবৃতি চাইছেন না তিনি৷ ‘প্রকৃত’ সাংগঠনিক রিপোর্ট হাতে চাইছেন শাহ-নাড্ডা। কিন্তু, বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বে ফাটল বিজেপি’র অন্দরে চিন্তা বাড়িয়েছে৷ শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। ফলে ৩৫০-এর লক্ষ্যপূরণ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন দিল্লির নেতৃত্বরা৷