bjp
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে রাজ্যে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস তথা অন্যান্য বিরোধী দল। আর ‘ইন্ডিয়া’ জোটের আসন সমঝোতা সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হতেই অস্বস্তি বাড়ছে বিজেপির। কারণ মসৃণ ভাবে আসন সমঝোতা হলে বিজেপির যে বিপদ বাড়বে সেটা আর নতুন কথা নয়। তাই নানা প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা যাচ্ছে গেরুয়া নেতাদের। জোট শেষ পর্যন্ত যাতে না হয় সেই লক্ষ্যে নানা কথা বলতে শোনা গিয়েছে তাঁদের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জোট হচ্ছে এবং তাতে যে বিজেপির লড়াই কঠিন হয়ে পড়বে সেটা ভাল করেই বুঝতে পারছেন গেরুয়া নেতৃত্ব। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ভারতে থাকা রাজ্যগুলির ১৩১টি লোকসভা আসন ছাড়াও যে চারটি রাজ্য নিয়ে বিজেপি সবচেয়ে চিন্তিত সেগুলি হল মহারাষ্ট্র, বিহার, হরিয়ানা এবং দিল্লি। গত লোকসভা নির্বাচনে শরিক দলকে সঙ্গে নিয়ে মহারাষ্ট্রে ৪৮টির মধ্যে ৪৪টি জয় পেয়েছিল এনডিএ। বিহারে ৪০টির মধ্যে ৩৯টি গিয়েছিল এনডিএ জোটের দখলে।
দিল্লিতে বিজেপি সাতটির মধ্যে সবকটিতেই জয়লাভ করে। একই ভাবে হরিয়ানার ১০টি আসনে বিজেপি একা লড়েই সব কটিতেই জয়লাভ করে। কিন্তু এবার পরিস্থিতির বদল হয়েছে। শিবসেনার উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠী কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে ভোটে লড়বে হাতে হাত মিলিয়ে। তাই গতবারের ফলের ধারে কাছে পৌঁছতে পারবে না বিজেপি। এখনও পর্যন্ত যে রাজ্যে সবচাইতে মসৃণ ভাবে আসন সমঝোতা নিয়ে কথাবার্তা এগিয়ে চলেছে এবং কার্যত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে, সেটা হল মহারাষ্ট্র। দিল্লিতেও কংগ্রেস ও আম পার্টির মধ্যে আসন সমঝোতার কথা এক প্রকার চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে বিহারে নীতিশ কুমার মাঝখানে কিছুটা ‘বেসুরো’ কথা বললেও এখন বিরোধীরা তাঁকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ায় তাঁর নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার মনোভাবটা কেটে দিয়েছে। তাই বিহারে কংগ্রেস, আরজেডি ও নীতিশের জেডি ইউ দলের মহাজোট বিজেপিকে ২০ আসনের নীচে নামিয়ে দিতে পারে বলে জল্পনা তুঙ্গে। অন্যদিকে হরিয়ানায় বিজেপি দীর্ঘদিন ধরেই শক্তিশালী। সেই রাজ্যে জেজেপি দলের সঙ্গে তাদের জোট রয়েছে। কিন্তু লোকসভায় আসন সমঝোতা তাদের মধ্যে ভেঙে গেলে বিজেপির বিপদ বাড়তে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হরিয়ানায় গত দু’বছরে ব্যাপক উত্থান হয়েছে আম আদমি পার্টির। দলের প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের জন্ম হরিয়ানাতে। তাই হরিয়ানার ভূমিপুত্রের পার্টি সেখানে দিন দিন শক্তিশালী হবে এটাই স্বাভাবিক। সেই জায়গা থেকে হরিয়ানাতে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির মধ্যে আসন সমঝোতার কথা কার্যত চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে কোনও রকম তিক্ততা ছাড়াই। তাই গত লোকসভায় এই চারটি রাজ্যে বিজেপি অসম্ভব ভাল ফল করলেও তার ধারে কাছে যাওয়া এবার কঠিন হয়ে যাবে তাদের।
এর পাশাপাশি বিজেপিকে চিন্তায় ফেলেছে দক্ষিণ ভারতের সমীকরণ। দক্ষিণ ভারতে যে ১৩১টি লোকসভা আসন আছে তাতে গতবার বিজেপি মাত্র ২৯টি পেয়েছিল। এর মধ্যে কর্ণাটক থেকে পেয়েছিল ২৫টি। বাকি চারটি এসেছিল তেলেঙ্গানা থেকে। কিন্তু গত বিধানসভা নির্বাচনে কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানায় বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। দুটি রাজ্যেই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। এরপর নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচানোর লক্ষ্যে কর্ণাটকে জেডিএস আবার বিজেপিমুখী হয়েছে। কিন্তু তাতে জেডিএসের মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। দলের একের পর এক মুসলিম নেতা জেডিএস ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন। বিজেপিতেও ভাঙন ধরবে বলে যথেষ্ট গুঞ্জন রয়েছে। একই ভাবে তেলেঙ্গানাতেও কংগ্রেসের উত্থানে শঙ্কিত বিজেপি। তাই দক্ষিণ ভারত থেকে শেষ পর্যন্ত হাতে গোনা কটি আসন বিজেপি পায় সেটাই এখন দেখার। সবমিলিয়ে জোট যথেষ্ট চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিজেপিকে। এর মোকাবিলা তারা কীভাবে করে সেটাই এখন দেখার।