কলকাতা: বিধানসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই যেন রাজ্য জুড়ে নানা বিষয়কে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পরিস্থিতি। একুশের মহারণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টানা ১০ বছর ব্যাপী শাসনের অবসান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখলে মরিয়া বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকে তাই শাসকদলের উপর আনা হচ্ছে একের পর এক আক্রমণ। সেই আবহেই এবার নতুন একগুচ্ছ দাবিতে ফের পথে নামতে চলেছে বিজেপি।
রাজ্যে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বন্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও বঞ্চনার প্রতিবাদে চলতি সপ্তাহেই বিধানসভা অভিযানের ডাক দিয়েছে বিজেপি, এদিন এমনটাই জানা গেছে সূত্রের খবরে। আগামী ১৩ জানুয়ারি বিজেপির বিধানসভা অভিযানের মূলে থাকবে ছয় দফা দাবি। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, বেতন পরিকাঠামো এবং শিক্ষা সংক্রান্ত আরো অন্যান্য দাবিতে মিছিল করে বিধানসভা পর্যন্ত যাবেন বিজেপি নেতা কর্মীরা। প্রাক-নির্বাচনী আবহে শহরের বুকে ফের এক মিছিল অভিযানকে নিয়ে আপাতত ছড়িয়েছে উত্তাপ। এপ্রসঙ্গে বিজেপি টিচার্স সেলের রাজ্য কনভেনার দিপল বিশ্বাস বলেছেন, “রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি নিয়ে বিজেপি টিচার্স সেলের প্রাথমিক শাখার তরফ থেকে বিধানসভা অভিযান করা হচ্ছে।” বুধবার বেলা ১২টায় রাজ্য বিজেপির সদর দপ্তর অর্থাৎ মুরলীধর সেন লেন থেকে বিজেপির এই মিছিল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পদ্ম শিবির সূত্রে খবর, বিজেপির টিচার্স সেলের রাজ্য প্রাথমিক শাখা এই সমগ্র অভিযানটির দায়িত্ব নেবে। শিক্ষকদেরও এই মিছিলে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে বিজেপি। দিলীপ বিশ্বাসের কথায়, “প্রাথমিক শিক্ষক ও অন্যান্য সমস্ত শিক্ষককেই এই মিছিলে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছি।” প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য কেন্দ্র নির্দেশিত সুযোগ সুবিধা এই রাজ্যে বরাদ্দ করা হয় নি, এমনটাই অভিযোগ বিজেপির প্রাথমিক শিক্ষা সেলের।
ঠিক কোন ৬ দফা দাবিতে বিধানসভা অভিযান করবে বিজেপি? এর মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে- ১) অবিলম্বে প্রাথমিক শিক্ষকদের কেন্দ্র নির্দেশিত সর্বভারতীয় হারে (PRT SCALE with notional effect from 01.01.2006) বেতন প্রদান করতে হবে। ২) সমস্ত শূন্যপদে অবিলম্বে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া মেনে কর্মী নিযুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে সমস্ত প্রশিক্ষিত প্রার্থীদেরকেই পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। ৩) প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে অবিলম্বে জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করতে হবে। ৩ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সরকারি উদ্যোগে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করতে হবে। ৪) রাজ্যের সবকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই অবিলম্বে নিয়োগ করতে হবে প্রধান শিক্ষক। ৫) শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে স্বচ্ছ ট্রান্সফার নীতির প্রচলন করতে হবে। ৬) প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে সিনিয়রিটি মেনে বেসিক হিসেব করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিজেপি টিচার্স সেলের রাজ্য কো-কনভেনার তথা প্রাথমিক শাখার রাজ্য ইনচার্জ সব্যসাচী ঘোষ সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, ভারতের সমস্ত রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় হারে বেতন দেওয়া হয়, শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেই তা ব্যাতিক্রম। “বাম আমলেও প্রাথমিক শিক্ষকরা বঞ্চিত ছিল, তৃণমূলের আমলেও তাঁরা চূড়ান্ত বঞ্চিত”, বলেন তিনি।