তমলুক: বিধানসভা নির্বাচনের আগে অন্তর্কলহে জেরবার দলের হাল ধরতে মাঠে নেমেছেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারীর দলবদলের পর থেকেই বঙ্গ রাজনীতিতে নন্দীগ্রামের গুরুত্ব বেড়ে গেছে নতুন করে। আজ সেই শুভেন্দু গড় থেকেই ভোট নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দিয়েছেন তিনি নন্দীগ্রাম থেকে ভোটে লড়বেন৷ কারণ, এই নন্দীগ্রাম তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ‘লাকি’!
নন্দীগ্রাম থেকে নিজেকে প্রার্থী ঘোষণার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমের একাংশকে আক্রমণ করেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ ভোটের আগে জনমত সমীক্ষায় উল্টো ফল দেখানো হচ্ছে বলেও এদিন নন্দীগ্রামের সভা থেকে দাবি করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সংবাদমাধ্যমের এহেন প্রচারের যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে জনগণের মধ্যে তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ মমতা৷ এদিন তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে খবর আছে, কেউ কেউ আজকালের মধ্যেই উল্টো সমীক্ষার রিপোর্ট দেখাবে।’’ বিজেপি নেতারা ভয় দেখিয়ে সংবাদমাধ্যমকে এই কাজ করতে বাধ্য করছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু ভোটের মুখে মমতার নিশানায় কেন সংবাদমাধ্যম? কোথায় কি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে? কোন সংবাদমাধ্যম কী দেখাবে, কী দেখাবে না, তাও কি নির্দিষ্ট করে দেবেন রাজনৈতিক দলের নেতারা? প্রশ্ন পর্যবেক্ষক মহলের একাংশের৷
এদিন নন্দীগ্রামের সভায় শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো৷ তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল যদি সমীক্ষায় ২১১টি আসনে জয় পায়, তবে বিজেপি নেতারা সাংবাদিকদের ভয় দেখিয়ে সেই সংখ্যা বদলে ১৫৮ করে দেবেন। অথবা বিজেপি ৫১ আসন পেলে তা বদলে দেওয়া হবে ৯২তে। দিল্লির নেতারা বলছেন, আর সংবাদমাধ্যম ভয়ে চুপ করে আছে৷” এরপরই সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে উড়ে আসে মমতার প্রশ্ন, ‘‘আর কতদিন ভয় পাবেন?’’ জনমানসের অভিব্যক্তিকে চেপে রাখা যায় না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
সংবাদমাধ্যমের ভোট পূর্ববর্তী সমীক্ষার ফলাফলে কোনো যায় আসে না, এদিন নন্দীগ্রামের জনসভায় এমনটাই জানিয়েছেন মমতা৷ তাঁর মতে আসল রিপোর্ট তিনি জেনে গিয়েছেন৷ দাবি করেন, তৃণমূল ২১১, বিজেপি ৫১ এবং বাকি আসন অন্যান্যরা পাবে৷ এদিন নন্দীগ্রাম থেকে মানুষের উদ্দেশ্যেও বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ বা সোশ্যাল মিডিয়ার সমস্ত ভিডিও বা খবর বিশ্বাস না করার পরামর্শই দিয়েছেন তিনি। এই সমস্ত ‘ফেক’ খবর ও তাদের প্রকাশকারীদের কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘ভেকধারীরা, ফেকধারীরা নাটক তৈরি করছে। আর মানুষ বিশ্বাস করে নিচ্ছে।’’ বিজেপির এই ধরণের ভুয়ো খবর ছড়ানোর কোটি কোটি গ্রুপ আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, এবার বিধানসভা ভোটের বড় চমক হিসেবে নন্দীগ্রাম থেকে লড়াই করবেন বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারীকে সম্মুখ সমরে টেক্কা দেওয়ার এই রণকৌশল কতটা কার্যকরী হয়, সেটাই এখন দেখার।