ভর্তুকিযোগ্য গ্যাসে বাধ্যতামূলক বায়োমেট্রিক, তথ্য চুরির আশঙ্কায় গ্রাহকরা!

ভর্তুকিযোগ্য গ্যাসে বাধ্যতামূলক বায়োমেট্রিক, তথ্য চুরির আশঙ্কায় গ্রাহকরা!

biometric data

কলকাতা: বছর ফুরোতে হাতেগোনা আর মাত্র কটা দিন৷ ইতিমধ্যেই অনেকে সেরে ফেলেছেন ক্রিস্টমাস পার্টি এবং 31st নাইটের পরিকল্পনা৷ তবে শুধু ঘোরাঘুরি কিংবা পার্টি করলেই চলবে না, সেলিব্রেশনের পাশাপাশি বছর শেষে রয়েছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷ এখনও হয়তো সকলে এই কাজটার কথা জানেন না৷ তাঁদের উদ্দেশে বলে রাখি, নববর্ষের আগে এই কাজটি না করলে কিন্তু বন্ধ হয়ে যেতে পারে আপনার হেঁশেলে আসা রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি৷ সরকারের নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী, রান্নার গ্যাসেও এবার লাগবে বায়োমেট্রিক৷ ৩১ তারিখের মধ্যে জমা করতে হবে আপনার KYC৷ (biometric data)

মধ্যবিত্তের রান্না ঘরে চিন্তার কারণ biometric data

মাস পড়তেই মধ্যবিত্তের রান্না ঘরে চিন্তার কারণ হয়ে ওঠে রান্নার গ্যাস৷ দাম বাড়ল না কমল, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে মাথায়৷ তবে বছর শেষে জুড়েছে আরও একটি চিন্তা৷ আর তা হল গ্যাসের বায়োমেট্রিক লিঙ্ক! কারণ ভারত সরকারের নির্দেশে এবার থেকে রান্নার গ্যাসে বাধ্যতামূলক বায়োমেট্রিক৷ না হলে মিলবে না যে ভর্তুকি৷  আর এই কাজ শেষ করতে সময় খুবই কম৷ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে বায়োমেট্রিক গ্রহণের প্রক্রিয়া৷ এই মর্মে গ্যাস ডিলারদের কাছে ইতিমধ্যেই বার্তা পৌঁছে গিয়েছে৷ শুরু হয়ে গিয়েছে বায়োমেট্রিক তথ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া৷ কিন্তু, প্রশ্ন হল এত কম সময়ের মধ্যে এই বিরাট সংখ্যক গ্রাহকের বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া এবং তা আধারের সঙ্গে লিঙ্ক করানো কি আদৌ সম্ভব? ফের দাঁড়াতে হবে লম্বা লাইনে? ফের হয়রানি! তার উপর অনেক গ্রাহকেরই নানা সমস্যা রয়েছে৷ কেউ বয়সের ভারে ন্যূব্জ, কেউ আবার হাসপাতালে ভর্তি৷ তাঁদের কী ভাবে নিয়ে আসা সম্ভব? তাহলে কী হবে?

এক্ষেত্রে বিষয়টা একটু আলাদা৷ এখানে গ্যাস ডিলার নিজেই পৌঁছে যাবেন আপনার বাড়িতে৷  গ্যাস জেলিভারি করার সময়ই এই কাজটি সেরে ফেলবেন ডিলিভারিম্যানরা৷ তাঁদের মোবাইলে থাকবে একটি বিশেষ অ্যাপ৷ সেই অ্যাপের মাধ্যমেই গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ বা মুখের ছবি স্ক্যান করা হবে৷ তার পর সেই তথ্য নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে৷ সবার আগে বায়োমেট্রিক নেওয়া হবে উজ্জ্বলা যোজনার আওতাভুক্ত গ্রাহকদের৷ তবে গ্রাহকরা চাইলে সরাসরি ডিস্ট্রিবিউটারের অফিসে গিয়েও KYC জমা করতে পারেন৷ তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে গোটা দেশে এই প্রক্রিয়া শেষ করা যে বেশ কঠিন, তা স্বীকার করে নিয়েছেন গ্যাস ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজন বিশ্বাসও৷ 

বাড়িতে গিয়ে বায়োমেট্রিক সংগ্রহের কথা বলা হলেও, এক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা রয়েছে৷ সরকারের তরফে এ বিষয়ে জনস্বার্থমূলক প্রচার না হওয়ায় অনেকেই এই বিষয়ে কিছু জানেন না৷ তাঁরা যে ডিলিভারিম্যানকে বায়োমেট্রিক সংগ্রহের অনুমতি দিয়ে দেবেন, তেমনটা নাও হতে পারে৷ ফলে বিষয়টি যত সহজ ভাবে বলা হচ্ছে, ততটাও সহজ নয়৷ ফলে এখানে সমস্যা শুধু সময় নয়৷ নিরাপত্তাও একটা বড় প্রশ্ন৷ 

গত কয়েক বছর ধরে যে ভাবে আধার বা ব্যাঙ্কের তথ্য হাতিয়ে জালিয়াতির চক্রের জাল ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে নতুন করে বায়োমেট্রিক লিঙ্কের মাধ্যমে প্রতারকরা প্রতারণার নতুন উৎসব খুঁজে পাবে নাতো? বায়োমেট্রিক তথ্য চুরির আশঙ্কাটা একেবারেই উড়েয়ে দেওয়া যাচ্ছে না৷ বায়োমেট্রিক তথ্যের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ প্রয়োজন হয়৷ মোবাইলের সিম তোলা থেকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, সবেতেই এখন বায়োমেট্রিক প্রয়োজন৷ আর জালিয়াতরা সেটাকেই হাতিয়ার করে নতুন ফন্দি এঁটেছিল৷ ফাঁকা হয়েছে একের পর এক গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট৷ বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা নিয়ে যখন উদ্বেগে মানুষ, তখন আরও একটি নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়ের সঙ্গে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি জুড়ে দিল সরকার৷ সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, কেন গ্যাসের ভর্তুকিতে বায়োমেট্রিক বাধ্যতামূলক করা হল? গ্রাহকদের বায়োমেট্রিক তথ্য যে সুরক্ষিত থাকবে, সেই নিশ্চয়তা দেবে কে? এক্ষেত্রে কোনও সুরক্ষাকবচ থাকছে কী? কেনই বা এত গুরুত্বপূর্ণ একটা তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বিক্রেতাদের? গ্যাস সংস্থা নিজে কেন এই দায়িত্ব নিচ্ছে না? সরকারের নয়া সিদ্ধান্তে চিন্তায় সাইবার বিশেষজ্ঞরা৷ চিন্তায় সাধারণ মানুষ৷ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × 2 =