৩ দশক ধরে বাজির কারবার! ব্যবসা চালাতে গিয়ে ভাইয়ের মৃত্যু! কে এই কৃষ্ণপদ বাগ?

৩ দশক ধরে বাজির কারবার! ব্যবসা চালাতে গিয়ে ভাইয়ের মৃত্যু! কে এই কৃষ্ণপদ বাগ?

এগরাঃ বাজি কারখানায় বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে শিরোনামে উঠে এসেছে এগরা। এক মুহূর্তে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে এগরা ১ ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রাম। অবৈধ বাজি কারখানা চালাতে গিয়ে একের পর মৃত্যু… রাস্তা, পুকুরে ছড়িয়ে ছিন্নভিন্ন দেহ। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা দেখে শিউরে উঠছেন সকলে। 

বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। যাঁদের অধিকাংশই মহিলা। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মর্মান্তিক এই ঘটনার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে বাজি কারখানার মালিক কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানুর নাম। স্থানীয়দের কাছে আতঙ্কের হয়ে উঠেছেন ভানু। কিন্তু কেন?  কে এই ভানু?  প্রশাসনের নাকের ডগায় কীভাবে অবৈধ এই বাজির কারখানা চালাচ্ছিলেন তিনি? শুরু হয়েছে চর্চা।  

স্থানীয় সূত্রে খবর, গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজি তৈরি করছেন ভানু। তাঁর তৈরি বাজির চাহিদাও ছিল বিপুল। একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন। তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল পড়শি রাজ্যেও।
বাম জমানায় সিপিএম নেতা ছিলেন কৃষ্ণপদ বাগ। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেই জোড়াফুল পতাকা ধরেন। ২০১১সালের পর থেকে এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা নামে পরিচিত। ২০১৩ – ২০১৮ সাল পর্যন্ত পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন এই কৃষ্ণপদ। মঙ্গলবার তাঁর কারখানাতেই ঘটে বিধ্বংসী বিস্ফোরণ। যদিও রেকর্ড বলছে, এই প্রথমবার নয়। বাজির কারবার চালাতে গিয়ে অতীতেও বিস্ফোরণ ঘটেছে ভানু বাগের কারখানায়। বছর ১৫আগে বাজি তৈরি করতে গিয়ে কৃষ্ণপদ ওরফে ভানুর বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। সেই বিস্ফোরণে নিজের ছোট ভাই বাদল বাগের মৃত্যু হয়। এরপর থেকে বাড়িতে বাজি বানানো বন্ধ করলেও, বাজি তৈরি বন্ধ করেননি তিনি।

বাড়ি থেকে প্রায় ৪০০মিটার দূরে মাঝমাঠে কারখানা তৈরি করেন তিনি। স্থানীয়দের দাবি, খানিকটা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েই কারখানার জন্য এই জায়গাটি দখল করেছিলেন কৃষ্ণপদ। কারখানায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয় প্রায় দেড়শো মিটার পাকা রাস্তা। ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মী নিয়ে নতুন করে শুরু হয় কাজ। বাজি আর মশলা রাখতে কারখানার পাশেই গোপন কুঠুরি তৈরি করেন। এই কারখানার মধ্যে একটি পুকুরও তৈরি করা হয়েছিল। যেখানে বাজি পরীক্ষা করা হত বলে অভিযোগ। 

বছর দু’য়েক আগেও অবৈধ বাজি উদ্ধারে নেমে ভানুর কারখানাতে অভিযান চালিয়েছিল এগরা থানার পুলিশ। সে বার বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ বাজি এবং বাজি তৈরির মশলা উদ্ধার হয়। গ্রেফতার করা হয়েছিল ভানুকে। তবে কিছু দিনের মধ্যেই জেল থেকে মুক্তি পান। বাড়ি ফিরে ফের বাজির ব্যবসায় নেমে পড়েন।

মঙ্গলবার কারখানায় বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ভানুর বিরুদ্ধে জমতে থাকা একাধিক অভিযোগ সামনে এনেছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, সব কিছু জেনেশুনেও চুপ ছিল পুলিশ। তাঁদের প্রশ্ন, একাধিকবার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও কীভাবে পুলিশের চোখের সামনে কারখানা চালাচ্ছিলেন তিনি? রাজনৈতিক পরিচিতির কারণেই কি এত বাড়বাড়ন্ত ছিল ভানুর? সেই প্রশ্নও তুলছেন স্থানীয়রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 2 =