কলকাতা: মূলত জালিয়াতি রুখতেই নোটবন্দি বা জিএসটি'র মতো ব্যবস্থা নিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু তাতে যে লাভের লাভ হয়নি কিছুই, তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বার্ষিক রিপোর্ট। দেশজুড়ে লাফিয়ে বেড়েছে কোটি কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি।
আরবিআই এর রিপোর্ট অনুযায়ী, চলতি আর্থিক বছরে ব্যাঙ্ক জালিয়াতি বেড়েছে প্রায় আড়াই গুণ। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে জালিয়াতির যে সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা তা গত আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০১৯-২০ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকায়। সুতরাং এক বছরে ১৫৯ শতাংশ ব্যাঙ্ক জালিয়াতি বেড়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র এক লক্ষ বা তার বেশি টাকার জালিয়াতির নিরিখেই এই হিসাবে করেছে আরবিআই।স্বাভাবিকভাবেই এর নিচের সংখ্যাগুলিকে হিসাবের আওতায় আনা হলে এর পরিমান আরও বাড়বে। তাই বলাই যায়, জালিয়াতি রুখতে ব্যর্থ কেন্দ্র।
আরবিআই তরফে বলা হয়েছে, গত আর্থিক বছরে মোট ৬ হাজার ৭৯৯টি জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছিল দেশে। শেষ বছর সেই সংখ্যাই ৮ হাজার ৭০৭ ছুঁয়েছে। দেখা গিয়েছে, তার মধ্যে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক গুলিতেই ৪ হাজার ৪১৩টি জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে, মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি। এর ফলে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক গুলির আর্থিক ক্ষতির পরিমান ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, মোট জালিয়াতির ৮০ শতাংশ। জালিয়াতি কাণ্ডে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক গুলির পরেই রয়েছে বেসরকারি ব্যাঙ্ক, ফরেন ব্যাঙ্ক, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আওতায় থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, স্মল ফিনান্স ব্যাঙ্ক, পেমেন্টস ব্যাঙ্ক ও আঞ্চলিক ব্যাঙ্ক গুলির নাম।
রিপোর্ট বলছে, করোনা মহামারীতেও থেমে থাকেনি ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ঘটনা। চলতি আর্থিক বছরে অর্থাৎ ২০২০-২১ বছরেও প্রতারণার ধারা অব্যাহত। প্রথম তিন মাস অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসে ২৮ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকার জালিয়াতির খবর প্রকাশ্যে এসেছে। মোট ১ হাজার ৫৫৮টি ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়েছে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই। দেখা যাচ্ছে এবারেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভুগছে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক গুলি। ইতিমধ্যেই মোট ১৯ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকার ধাক্কা খেয়েছে ওই ব্যাঙ্ক গুলি। এর ফলে লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক গুলির ফাঁক আরও স্পষ্ট হচ্ছে। যদিও এর পুরোটাই জনগণের ঘাড় ভেঙে আদায় করবে ব্যাঙ্ক।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ঋণ নেওয়ার নাম করেই প্রতারকরা এই জালিয়াতি করেছে। যুক্তি হিসাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগের আর্থিক বছরের উদাহরণ দিয়েছে। ব্যাঙ্ক তরফে বলা হয়েছে, আগের বছর মাত্র ৫০টি ঘটনায় মোট প্রতারণার ৭৬ শতাংশ টাকা জালিয়াতি হয়েছে, ওই ৫০টি ঘটনার প্রত্যেকটিই ঋণ কেন্দ্রীক। বিশেষজ্ঞদের কথায়, ঋণ নিয়ে পালিয়ে যাওয়া প্রতারকের হদিশ না পাওয়া গেলে ঋণের পুরো টাকাটাই ব্যাঙ্কের লোকসান খাতে ধরা হয়। মূলত অন্তর্বর্তীকালীন অডিটে ফাঁক রয়েছে বলেই জানাচ্ছে আরবিআই। এমনকি, ব্যাঙ্ক তরফে প্রতারণা রোখার সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা স্বীকার করে জালিয়াতির পিছনে নিজেকেই দায়ী করছে আরবিআই।