কলকাতা: বাচ্চা থেকে বুড়ো, চকোলেটে কামর বসাতে কে না ভালোবাসে? কিন্তু জানেন কি এই চকোলেটের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিষ৷ চকোলেটে মিলেছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সালমোনেল্লা টাইফিমিউরিয়াম এবং লিস্টেরিয়া৷ যার প্রভাবে বাড়ছে পেটের অসুখ ও অন্ত্রের সংক্রমণ৷ এই বিষয়ে সতর্ক করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)৷ তারা জানিয়েছে, এটা আসলে সালমোনেল্লা বিষক্রিয়া৷ সালমোনেল্লা মূলত টাইফয়েডের কারণ এবং লিস্টেরিয়া অন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায়৷ যাঁদের হজম শক্তি কম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তাদের জন্য এটা ভয়ঙ্কর হতে পারে৷ বিশেষ করে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা৷ কারণ, শিশুদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেকটাই কম৷
লিস্টেরিওসিস হওয়ার লক্ষণগুলি সাধারণ ফ্লুয়ের মতোই৷ এর ফলে পেশীতে টান পড়া বা ব্যথা হওয়া, ঠান্ডা লাগা, গ্য ম্যাজম্যাজ করা কিংবা ডায়রিয়া বা লাগাতার পেটের অসুখ দেখা দিতে পারে৷ এরই মধ্যে আতঙ্কের কথা শুনিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা৷ তারা জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই বিশ্বের ১১টি দেশে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে৷
উল্লেখ্য, ভারতে ছোটদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় চকোলেট হল ‘কিন্ডার জয়’৷ যা তৈরি করে ইতালি ভিত্তিক চকোলেট প্রস্তুতকারক সংস্থা ফেরেরো৷ ইতিমধ্যেই এশিয়া ও ইউরোপের বেশ কিছু বাজার থেকে এই চকোলেট তুলে নেওয়া হয়েছে৷ কারণ তাতে মিলেছে সালমোনেল্লা টাইফিমিউরিয়াম এবং লিস্টেরিয়া৷ এই দুই ব্যাকটেরিয়াই দীর্ঘদিন মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঘুমন্ত অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে৷ বাইরের তাপমাত্রায় এলেই ফের সজীব হয়ে ওঠে৷
এক বিবৃতিতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছেন, ১১টি দেশ থেকে ১৫১টি কেস সামনে এসেছে৷ যা চকোলেট জাতীয় পণ্য থেকে ছড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷ ৮৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে৷ তবে প্রাণহানীর ঘটনা ঘটেনি৷ এই পণ্যগুলি বাজার থেকে না সরানো পর্যন্ত আশঙ্কা মুক্ত হওয়া সম্ভব নয় বলেই জানিয়েছে হু৷ এক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে রয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলি৷
২৭ মার্চ ব্রিটেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে মোনোফাসিস সালমোনেলা টাইফিমুরিয়াম (এস.টাইফিমুরিয়াম) সিকেয়েন্স টাইপ ৩৪ সংক্রমণের একটি ক্লাস্টারের বিষয়ে জানায়৷ বিশ্বব্যাপী অন্তত ১১৩টি দেশে এই ধরনের চকোলেট বিক্রি করা হয়েছিল৷ ইন্টারন্যাশনাল ফুড সেফটি অথরিটিস নেটওয়ার্কের তরফে একটি বিশ্বব্যাপী সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, বিশ্ব বাজার থেকে এই পণ্যতুলে নেওয়া হোক৷ এর মধ্যে রয়েছে কিন্ডায় জয়ও৷ ভারতের পুণেতে কিন্ডার জয় চকলেট তৈরির কারখানা আছে ফেরেরোর৷ তবে বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে, এখনও পর্যন্ত ভারতের বাজার থেকে এই চকোলেট তুলে নেওয়া শুরু করেনি সংস্থার কর্তৃপক্ষ৷
এদিকে, লিস্টেরিয়ার সম্ভাব্য উপস্থিতির কারণে ফ্লেক এবং ডেইরিমিল্ক বাটন সহ ছ’টি ক্যাডবেরি প্রোডাক্ট বিক্রি প্রত্যাহার করার কথা ঘোষণা করেছে ক্যাডবেরি প্রস্তুতকারক সংস্থা মুলার৷ লিস্টেরিয়ার আক্রমণে মানুষের শরীরে বিরল সংক্রমণ ‘লিস্টিরিওসিস’ হতে পারে। যদিও এই সংক্রমণ খুব একটি গুরুতর হয় না৷ তা সত্বেও একটি নির্দিষ্ট ব্যাচে তৈরি ক্যাডবেরি প্রোডাক্টগুলির কথা জানিয়ে সেগুলি না খাওয়ার ও ফেরত দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে মুলার। তবে, ওই নির্দিষ্ট ব্যাচের ক্যাডবেরি পণ্য ছাড়া অন্য কোনও ব্যাচ প্রভাবিত হয়নি বলেও উল্লখ করা হয়েছে হয়েছে। নিম্নলিখিত ডেজার্টগুলির ওপর সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে ফুডস স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি (এফএসএ)-
* ক্যাডবেরি ডাইম চকোলেট ডেজার্ট
* ক্যাডবেরি ক্রাঞ্চি চকোলেট ডেজার্ট
* ক্যাডবেরি ফ্লেক চকোলেট ডেজার্ট
* ক্যাডবেরি ডেইরি মিল্ক বাটন চকোলেট ডেজার্ট
* ক্যাডবেরি ডেইরি মিল্ক চাঙ্কস চকোলেট ডেজার্ট
* ক্যাডবেরি হিরোস চকোলেট ডেজার্ট
বলা হচ্ছে, গর্ভবতী মহিলা এবং ষাটোর্ধ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে, কারণ এই ব্যাকটেরিয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে। ব্রিটেনের ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি (এফএসএ) প্রত্যেক গ্রাহককে নিজেদের ওয়েবসাইটে পণ্যগুলির মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ পরীক্ষা করার জন্য অনুরোধ করেছে।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>