শান্তিপুর: পুজোয় অনেকগুলি জামা হয়েছিল তার৷ বাবা-মা শখ করে মেয়ের জন্য জামা কিনে এনেছিলেন৷ জমা দিয়েছিল পরিজনেরাও৷ কিন্তু সব কিছু তেমনই সাজানো রইল৷ পরা হল না একরত্তি মেয়ে তৃষার৷ গতকাল রাতে মায়ের কোল থেকে জলে পড়ে মৃত্যু হয় ১৪ মাসের শিশুটির৷ যদিও ঘটনাটি এতটাও সহজ বলে মেনে নিতে পারছেন না অনেকেই৷ প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, কোল থেকে পড়ে নয়, ছোট শিশুটিকে ইচ্ছাকৃত ভাবেই গঙ্গার জলে ছুড়ে ফেলেছে তার জন্মদাত্রী মা৷
আরও পড়ুন- পদ্ম শিবিরে ভাঙন অব্যাহত, BJP ছেড়ে তৃণমূলে ঘরওয়াপাসি করলেন সব্যসাচী দত্ত
শান্তিপুর বালিয়াডাঙ্গা পান পাড়ার বাসিন্দা তারক ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী তাপসী ঘোষ তাঁদের এক পুত্র ও ১ বছরের কন্যা সন্তানকে ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন৷ কালনা ঘাট থেকে লঞ্চে উঠেছিলেন তাঁরা৷ নৃসিংহপুর ঘাটে ফেরার সময় মাঝ নদীতে ঘটনাটি ঘটে৷ লঞ্চের অন্য যাত্রীদের বক্তব্য, শিশুটি মায়ের কোলেই ছিল৷ আচমকায় জলে ঝপ করে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ হয়৷ তারপরই শোনা যায় শিশুটির কান্নার আওয়াজ৷ তাঁদের অভিযোগ, অসাবধানতা বশত নয়, শিশুটিকে ইচ্ছে করেই গঙ্গায় ফেলে দিয়েছে তার মা।
পরিবারের দাবি, বাড়িতে ছোট খাটো অশান্তি ছিল ঠিকই৷ কিন্তু এমন কোনও জটিলতা ছিল না যে ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের একরত্তি মেয়েকে এই ভাবে গঙ্গার জলে ছুড়ে ফেলে দেবে মা৷ মৃত শিশু কন্যা তৃষার বাবা অমিত ঘোষ বলেন, আমি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও কী ভাবে এই ঘটনা ঘটে গেল তা বুঝতে পারলাম না। ইচ্ছাকৃতভাবে আমার স্ত্রী এই কাজটা করেছে সেটা মেনে নিতে পারছি না। পুজোতে ওর জন্য জামা কিনে রেখেছিলাম। ওর পরা হল না৷ তার আগেই চলে যেতে হল।
গতকাল ঠিক কী হয়েছিল? অমিতবাবু বলেন, ‘গতকাল ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম৷ এপাড়ে বাইক রেখে আমরা ঘাট পেরিয়ে ওপাড়ে যাই৷ ফেরার সময় স্বাভাবিক ভাবেই আমরা কথাবর্তা বলেছি৷ ছেলেকে দোকান থেকে খাবারও কিনে দিয়েছি৷ মেয়েটা কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিল৷ ওপাড়ে টোটো থেকে নামার পর স্ত্রী ও ছেলেকে হাত ধরে লঞ্চি তুলে দিই৷ স্ত্রীকে পাশেই বসাই৷ এরই মধ্যে এক পরিচিতের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁর সঙ্গে কথা বলছিলাম আমি৷ লঞ্চও তখন ছেড়ে দিয়েছে৷ কিছুটা যাওয়ার পরই হঠাৎ একটা শব্দ শুনে সকলে চমকে যা৷ মাঝিরা চেঁচিয়ে উঠে বলে, কে কী ফেললে?
আমিত বাবু বলেন, ‘আমি খেয়ালই করিনি কখন আমার পাশ থেকে আমার স্ত্রী উঠে গিয়েছে৷ যে দিক থেকে শব্দ এসেছে সকলে তখন সেদিকেই ভিড় জমিয়েছে৷ ওখানে গিয়ে দেখি আমার স্ত্রী দাঁড়িয়ে রয়েছে, কোলে মেয়ে নেই৷ এক মহিলা বললেন, ফেলে দিয়েছে৷ এর পর অনেক খোঁজাখুজি করেও আর মেয়েকে পাইনি৷’
আরও পড়ুন- বিধায়ক হিসাবে শপথ নিলেন মমতা, প্রথা ভেঙে শপথবাক্য পাঠ করালেন রাজ্যপাল
অমিতবাবুর দাদা বলেন, সংসারে বড় কোনও অশান্তি ছিল না৷ ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের সন্তানকে জলে ফেলে দেবে, ভাবতে পারছি না৷ অমিত বাবুর বোন বলেন, রবিবারই এসে ভাইপো-ভাইঝিকে পুজোর জামা দিয়ে গিয়েছিলাম৷ এর পরেই এই দুঃসংবাদ আসে৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷