নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে সিবিআই-কে সবচেয়ে বেশি নাকানি-চোবানি খাইয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ সাহা। দুর্নীতির তথ্য আড়াল করতে নিজের দুটি মোবাইল তদন্তকারীদের সামনেই পুকুরে ফেলে দেন মুর্শিদাবাদের বড়ঞার তৃণমূল বিধায়ক। প্রায় ৭২ ঘণ্টার চেষ্টায় পুকুর থেকে তা উদ্ধার করেন তদন্তকারীরা।
কিন্তু, মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে পুকুর থেকে যে মোবাইল দুটি উদ্ধার করেছিল সিবিআই সেগুলি থেকে তথ্য পুনরুদ্ধার কতটা সম্ভব! তানিয়ে প্রথম থেকেই সন্দেহ ছিল। কিন্তু, তদন্তকারীরা বলছেন প্রযুক্তির অস্ত্রেই তথ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে।
তদন্ত সংস্থা সূত্রের বক্তব্য, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য ছবি, কথোপকথোন মুছে ফেলে নানা চেষ্টা করেছিলেন জীবনকৃষ্ণ সাহা৷ কিন্তু, কোনও বুদ্ধিই ধোপে টেকে নি। সবকিছুই পুনরুদ্ধার হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত শুরু হওয়ার পর পরই ছবি, কথোপকথন মোবাইল ফোন থেকে ডিলিট করতে শুরু করেছিলেন জীবনকৃষ্ণ সাহা। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। বিধায়কের অজান্তেই ‘ডিলিট’ করা তথ্য আধুনিক মোবাইলে লুকিয়ে ছিল।
ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে ওই দুটি মোবাইল ফোন থেকে সেই সব তথ্যই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, দুটি মোবাইল থেকে প্রচুর কনভার্সেশন ও ছবি ডিলিট করা হয়েছিল যা পুনরুদ্ধার হয়েছে। বিধায়কের কাছ থেকে কোথায় কোথায় দুর্নীতির টাকা গিয়েছে তারও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ মিলেছে পুনরুদ্ধার করা ‘ডিলেটেড ডেটা’ থেকে। পুনরুদ্ধার করা তথ্যের মধ্যে বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীর সুপারিশপত্র পাওয়া গিয়েছে।
এছাড়াও মিডলম্যান বা দালাল এবং প্রভাবশালীদের মাধ্যমে জীবনকৃষ্ণ সাহা কীভাবে নিয়োগ দুর্নীতি চালিয়েছিলেন, সেই বিষয়েও নানা তথ্য দিয়েছে তাঁর মোবাইল। শতাধিক ভয়েস কলও পাওয়া গিয়েছে মোবাইল থেকে।
তদন্তকারীদের দাবি, বিধায়কের দুটি মোবাইল ফোন থেকেই ১০০ শতাংশ ডাটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় যা তদন্তকারীদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হিসাবে বিবেচিত হবে।
গত মাসেই মুর্শিদাবাদের বড়ঞাঁর তৃণমূল বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের বিশেষ দল৷ চলে তল্লাশি৷ অভিযোগ, সেই সময়েই জিজ্ঞাসাবাদের ফাঁকে নিজের ২টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন বাড়ির পিছনের পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেন বিধায়ক৷ যা উদ্ধার করতে সময় লেগে যায় প্রায় ৩ দিন। পুকুরের জল ছেঁচে, জেসিবি মেশিন এনে মাটি কেটে উদ্ধার করা হয় জীবনকৃষ্ণের ২ টি ফোন৷ সেই মোবাইল থেকেই মুছে ফেলা সব তথ্য পুনরুদ্ধার করল সিবিআই।