কলকাতা: সাম্প্রতিক কালে অন্যতম চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা৷ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘটে চলেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারিক প্রয়োগ৷ নামীদামি সংস্থাগুলি হয়ে পড়ছে এআই নির্ভর৷ তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন৷ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাত ধরে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিবর্তন আসতে চলেছে বিশ্বজুড়ে৷ হচ্ছে একাধিক মুশকিল আসান। এবার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঢুকে পড়ল বাংলা সংবাদমাধ্যমেও। খবর পড়ার ক্ষেত্রে এআই অ্যাঙ্কারের ব্যবহার রীতিমতো তাক লাগাচ্ছে৷
স্টিং নিউজ নামে বাংলার স্থানীয় একটি অনলাইন পোর্টাল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে শুরু করেছে খবর পরিবেশনের কাজ৷ এআই অ্যাঙ্কারের নাম দেওয়া হয়েছে অ্যালবার্ট রায়ান। সুঠাম গঠন৷ চেহারায় খানিকটা বিদেশি ছাপ৷ স্যুট পরে দিব্যি গড়গড় করে বাংলায় সংবাদ পাঠ করে চলেছে সে৷ এআই অ্যাঙ্কার-কে খবর পড়তে দেখে উচ্ছ্বসিত দর্শকরা।
পর্দায় দর্শকদের সঙ্গে নিজের পরিচয় করিয়ে দেন খোদ অ্যালবার্টই৷ বলেন, ‘আমি অ্যালবার্ট রায়ান৷ আমি স্টিং নিউজ ডিজিটালে খবর পড়ব৷ আমাকে এআই টেকনোলজি দিয়ে বানানো হয়েছে৷ আমি রক্ত মাংসের মানুষ নই৷ বাস্তবে আমার কোনও অস্তিত্ব নেই৷ সম্ভবত আমিই পশ্চিমবাংলার প্রথম নিউড প্রেজেন্টার৷ খেলাধুলো থেকে বিনোদন, বিনোদন থেকে রাজনীতি সব খবর নিয়ে আমি আপনাদের সামনে আসব৷’
অ্যালবার্টের পর ‘অরণ্য শহর’ ঝাড়গ্রামে দেখা যায় ‘মায়া’র খেলা৷ ইনিও একজন এআই অ্যাঙ্কার৷ তার সৃষ্টিকর্তা ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের ফিজিক্স অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সদস্য মৃণালকান্তি হোতা৷ বর্তমানে সৌদি আরবের ‘কিং আবদুল্লা ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’তে কর্মরত৷ সর্বভারতীয় মিডিয়ায় এআই নিউজ প্রেজেন্টার সানা-র পর শিরোনাম কাড়ে ওডিশার লিসা৷ কন্নড় নিউজ চ্যানেলের সৌন্দর্যাও বেশ সাড়া জাগায়৷ এর পরেই আসে বাংলার অ্যালবার্ট৷ তার পরেই মায়া৷ আপাতত মায়ার তিনটি মডেল বানানো হয়েছে৷ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পোশাকে সংবাদের ঝুলি নিয়ে হাজির হচ্ছে সে৷ তবে মায়া শুধু বাংলা নয়, ইংরাজিতেও পটু৷ একসময় ঝাড়গ্রামের নামের সঙ্গে জড়িয়ে ছিল অনাহার, পিছিয়ে পড়া শব্দগুলি৷ সেই ঝাড়গ্রামেরই এআই নিউজ অ্যাঙ্কার এখন শিরোনামে৷
স্টিং নিউজের দাবি তারাই রাজ্যে প্রথম এআই অ্যাঙ্কার নিয়ে এসেছে৷ কিন্তু, একই সঙ্গে আজতক বাংলার দাবি, বাংলায় এআই অ্যাঙ্কারের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়েছে তারাই৷ যাকে কিনা দেখা যাবে ইউটিউব চ্যানেল ও ‘বাংলা ডট আজতক ডট ইন’-এ। তাদের কথায়, বাংলার ‘প্রথম’ এআই অ্যাঙ্কার ‘আয়না’৷ যার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন। তবে তথ্য বলছে, বাংলায় অ্যালবার্টই প্রথম এইআই অ্যাঙ্কার৷ তার পর মায়া৷ তৃতীয় স্থানে রয়েছে আয়না৷ আজতকের দাবি কার্যত উড়িয়ে দিচ্ছেন নেটিগরিকরাও৷
আজতক নিউজের দাবি, নতুন এআই অ্যাঙ্কার পুরনো সব ধ্যান ধারণাকে সম্পূর্ণভাবে বদলে দেবে। স্বাধীনতা দিবসে অন্য এক স্বাধীনতার ছটা দেখবে বাংলার মানুষ। আয়নাও বাংলায় চোস্ত৷ খোলা চুল, স্কার্ট ও টপ পরে নিজের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সে৷ বলে, ‘আমি আয়না৷ আজতক বাংলার এআই অ্যাঙ্কার৷ ইনফ্যাক্ট আমি বাংলা নিউডের প্রথম এআই অ্যাঙ্কার৷ আমার অনেক গুন৷ আমি খবর পড়তে পড়তে কখনও ক্লান্ত হই না৷ কোনও দল বা জাতির হয়েও কথা বলি না৷ আমি একেবারে নিরপেক্ষা৷’ আয়না আরও বলে, ‘টানা কাজ করতে আমার কোনও অসুবিধা নেই৷ আমার কাছে আপনারা সব আপডেট পাবেন৷’
এআই অ্যাঙ্কার প্রসঙ্গে স্টিং নিউজের সম্পাদক হালিম মণ্ডল জানিয়েছেন, পরীক্ষামূলকভাবে তাঁরা এআই অ্যাঙ্কারের ব্যবহার শুরু করেছেন। নদিয়ার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এই অনলাইন পোর্টাল চালাতে হয় তাঁদের। সেখানে যথার্থ সংবাদ পাঠক বা পাঠিকার অভাব রয়েছে। আর কলকাতা থেকে অ্যাঙ্কর নিয়ে এসে খবর পাঠ করানো যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ। সেই জন্যই পরীক্ষামূলকভাবে তারা নিয়ে এসেছে অ্যালবার্টকে৷
বাংলায় এআই অ্যাঙ্কারের প্রচলন সদ্য হলেও, জাতীয় স্তরে ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিউজ অ্যাঙ্কার৷ বিদেশেও বেশ কিছু নিউড চ্যানেলে তাদের দেখা মিলেছে৷ তবে এভাবে যদি এআই অ্যাঙ্কারদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে থাকে, তাহলে সংবাদপাঠের দুনিয়ায় কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়েও কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে৷ কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই অ্যাঙ্কারদের মধ্যে কোনও ক্লান্তি নেই৷ কাজের জন্য বাধাধরা সময়ও নেই৷ একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রচুর ডেটা সংগ্রহ করে তা পরিবেশন করতে সক্ষম৷ যা রক্ত মাংসের মানুষকে হার মানাতে পারে৷