এগরায় বিস্ফোরণকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত ভানু বাগকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার ওড়িশা থেকে আহত অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই সঙ্গে তাঁর পুত্র বিশ্বজিৎ বাগ এবং ভাইপো ইন্দ্রজিৎ বাগকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিস্ফোরণের পর থেকেই পড়শি রাজ্য ওড়িশায় ভানুর গা ঢাকা দেওয়া নিয়ে সন্দেহ ছিল পুলিশের। সেই মত বুধবার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ধরে তাঁর খোঁজ শুরু করে রাজ্য় পুলিশ ও সিআইডি। ওড়িশায় পৌঁছে যায় পুলিশের টিম। বৃহস্পতিবার কটকের এক হাসপাতাল থেকে আহত ভানুকে গ্রেফতার করা হয়।
তবে গ্রেফতার করা হলেও ভানুকে এখনই এ রাজ্যে আনা যাচ্ছে না বলেই সূত্রের খবর৷ বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভানু বাগ। সেখানেই তাঁর চিকিৎসা চলছে৷ তাই, তাঁকে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে। সুস্থ হলেই অভিযুক্ত ভানুকে ট্রানজিট রিম্যান্ডে পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে আসা হবে বলে খবর৷
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পরপরই অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বাইকে চেপে ওড়িশার দিকে চম্পট দিয়েছিলেন ভানু বাগ। তাঁর শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে যায় বিস্ফোরণে। মোবাইলের সূত্র ধরে ভানুর খোঁজ মিলতেই কটকের হাসপাতাল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আপাতত নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে ভানু ওরফে কৃষ্ণপদ বাগকে। তাঁর ছেলে ও ভাইপোকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ এগরা ১ ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রামের এগরায় ভানুর বেআইনি বাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ৯ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছেন একাধিক। তাঁদেরও চিকিৎসা চলছে। বিস্ফোরণের পর থেকেই বাজি কারখানার মালিক ভানু পলাতক ছিলেন। অভিযুক্ত ভানুকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। অবশেষে বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্তে নেমে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত ভানু বাগকে বাগে পেল পুলিশ।
৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাজি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ভানু বাগ। ‘সুখ্যাতি’র কারনে বাজি ‘সম্রাট’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। স্থানীয় সূত্রের খবর, ভানু বাগ এলাকার পরিচিত তৃণমূল নেতা হিসেবেই। তবে, বাম আমল থেকেই নাকি বারবার একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে এই ভানু বাগের বিরুদ্ধে৷ বাজি তৈরির কারবার চালাতে গিয়ে অতীতে একাধিক বিস্ফোরণ ঘটেছে ভানুর কারখানায়। যার জন্য বারবার ঠিকানা বদলেছে কারখানার। সুত্রের খবর, প্রথমে ১৯৯৫, তারপর ১৯৯৮ এবং তারপর ২০০১৷ একের পর এক বিস্ফোরণ হয়েছে তাঁর অবৈধ বাজি কারখানায়৷ এমনকী, বিস্ফোরণে ভাই বাদল বাগেরও মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু, ভাইয়ের মৃত্যুর পরেও বেআইনি কারবার বন্ধ করেনি ভানু৷
এলাকাবাসীর দাবি, শুধু বাজিই নয়, রীতিমতো ‘বোমা বানানোর ফ্যাক্টরি’ চালাতো এই ভানু৷ বিস্ফোরণের পর থেকে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিস্তর ক্ষোভ দেখিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের গাফিলতির জেরেই এলাকায় ভানুর বাড়বাড়ন্ত ছিল। এতই নাকি তাঁর প্রতিপত্তি যে, বার বার দুর্ঘটনা, বিস্ফোরণের পরেও বন্ধ করা যায়নি অবৈধ কারখানা৷ ২০২২ সালে একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন এই অভিযুক্ত৷ পরে ছাড়া পেয়ে যান৷ জেল থেকে ফিরে ফের পুরনো কারবার শুরু করেন ভানু। খাদিকুল গ্রামের মাঝ মাঠে অবস্থিত সেই কারখানাতেই মঙ্গলবার ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।