কলকাতা: চব্বিশের লোকসভায় বাংলা থেকে ৩৫টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা আগেই বেঁধে দিয়েছেন অমিত শাহ। এবার রাজ্য নেতৃত্বদের জন্য ‘হোমওয়ার্ক’ দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
লোকসভার আগে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন বঙ্গ বিজেপির কাছে কার্যত অ্যাসিড টেস্ট। তাই এখন থেকেই সংগঠন সাজাতে উঠে পড়ে লেগেছে গেরুয়া শিবির। সম্প্রতি, ২ বার রাজ্য থেকে ঘুরে গিয়েছেন অমিত শাহ। দলের বুথ স্তরের বেহাল ছবি তাঁর সামনে ফুটে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে শুভেন্দু-সুকান্তদের এখন থেকেই ময়দানে নামার নির্দেশ দিলেন শাহ।
সূত্রের খবর, সায়েন্স সিটিতে আয়োজিত রবীন্দ্রসন্ধ্যা অনুষ্ঠানের শেষে রাজ্যের শীর্ষ নেতাদের মৌখিক কিছু নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার মধ্যে জনসংযোগ বাড়ানো থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জেলায় আরও বেশি করে ঘুরে বেড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কিন্তু, কেন এমন নির্দেশ?
বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, রাজ্য নেতৃত্ব নয়াদিল্লিতে যে রিপোর্ট দিয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই বলে পাল্টা রিপোর্ট জমা পড়েছে। এমনকী একটি সমীক্ষা সংস্থাকে দিয়ে সার্ভেও করিয়েছে পদ্ম শিবির। যেখানে দেখা গিয়েছে, দলের বুথ স্তরে সংগঠন একদম তলানিতে।
তাই নির্বাচনের আগে প্রত্যেক জেলায় ঘুরে দলের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানো এবং জনসংযোগে নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অমিত শাহ। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে আরও বেশি করে মানুষের কাছে যেতে বলেছেন তিনি।
দলীয় সূত্রে খবর আগামী জুন মাসে আরেক দফা রাজ্য সফর করবেন অমিত শাহ! সেই সময়ে তিনি এই হোমওয়ার্কের রিপোর্ট খতিয়ে দেখবেন। যদিও, সেই সফরের নির্দিষ্ট তারিখ এখনও জানা যায়নি। কিন্তু, দুর্বলতা কি শুধু তৃণমূল স্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? না…অমিত শাহের একাধিক অনুষ্ঠানে দিলীপ ঘোষের অনুপস্থিতি অবশ্য অন্য ইঙ্গিতই দিচ্ছে। যা ঘিরে দলের অন্দরেই শুরু হয়েছে নানা ফিসফাস।
এর আগে, অমিত শাহ যখন সিউড়িতে সভা করেছিলেন, সেই সময় বিজেপির সর্বভারতীয় সহ– সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাড়ি দিয়েছিলেন আন্দামান। সেই সময় দাবি করা হয়, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির স্টাডি ট্যুর করতেই নাকি দিলীপ ঘোষ আন্দামান গিয়েছিলেন। কিন্তু, ২৫ বৈশাখের অনুষ্ঠান নিয়ে যখন বিজেপির এতো ধুমধাম, তখনও জোড়াসাঁকো থেকে পেট্রাপোল, এমনকী সায়েন্স সিটিতে আয়োজিত রবীন্দ্র–সন্ধ্যাতেও অনুপস্থিত ছিলেন দিলীপ। বার বার একই ঘটনা কি তবে দূরত্বের ইঙ্গিত? বাড়ছে জল্পনা।
কিন্তু, কেন এই দূরত্ব? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিলীপ ঘোষ সংগঠন ভাল বোঝেন। তাঁর হাত ধরেই বাংলায় বিজেপির উত্থান হয়েছে। ২০১৯ এর লোকসভায় তাঁর হাত ধরেই বঙ্গে বিপুল সাফল্য পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। কিন্তু সুকান্ত–শুভেন্দুর কেমিস্ট্রি সেই অর্থে এখনও পর্যন্ত বড় কোনও চমক দিতে পারেনি।
আবার সূত্র বলছে, দিলীপ ঘোষ হলেন এঁদের বিরোধী। এঁরা যেভাবে দল এবং সংগঠন চালাচ্ছেন তা মেনে নিতে পারছেন না বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। এনিয়ে নয়াদিল্লিতে নালিশও করেছিলেন। কিন্তু, কাজ হয়নি বলেই অভিযোগ। উল্টে দিলীপের নামে অভিযোগ যাঁরা জমা দিয়েছেন তাঁদেরই সামনের সারিতে আনা হয়েছে। তাহলে কি দলের অন্দরেই কোণঠাসা করা হচ্ছে দিলীপ ঘোষকে? পদ্ম বনে শোনা যাচ্ছে নতুন গুঞ্জন।