কলকাতা: আমেরিকার আকাশে চিনা ‘স্পাই’ বেলুন নিয়ে হুলস্থূল৷ দিন কয়েক পর্যবেক্ষণের পর সেটিকে গুলি করে নামানো হলেও, মেটেনি বিবাদ৷ উল্টে যুযুধান দুই শিবিরের মধ্যে চড়ছে কূটনৈতিক সম্পর্কের পারদ৷ গত বছর নভেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মুখোমুখি হয়েছিল চিন ও আমেরিকা৷ সেই সময় চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পরস্পরকে বলেছিলেন, ‘দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধের কোনও প্রয়োজন নেই।’ এই বৈঠকের পর দুই দেশ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ আরও নিবিড় করার উদ্যোগও নেয়। কিন্তু আমেরিকার আকাশে একটি ‘গোয়েন্দা বেলুন’ ঢুকে পড়ে সব চেষ্টায় জল ঢালল।
আরও পড়ুন- উষ্ণ হচ্ছে বিশ্ব, গবেষণায় উঠে এল ভয়ঙ্কর তথ্য
যোগাযোগ স্থাপন থেকে তথ্য বিনিময়, বিভিন্ন ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছিল আমেরিকা ও চিন৷ সেই উদ্দেশে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি চিন সফরের কথা ছিল মার্কিন বিদেশমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের। কিন্তু মার্কিন ভূখণ্ডে চিনা বেলুনের উপস্থিতি সব ভণ্ডুল করল৷
চিনের দাবি, ওই বেলুনটি গুপ্তচরবৃত্তির জন্য ছিল না। বরং আটলান্টিক উপকূলে পরিবেশ, আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার কাজ করছিল। হাওয়ার ধাক্কায় সেটি নিজের গতিপথ বদলে আমেরিকার আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছে। যদিও বেজিংয়ের এই দাবি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে না পেন্টাগন৷ তাদের দাবি, বেলুনটি সাধারণ কোনও বেলুন নয়, এতে অত্যাধুনিক সোলার প্যানেলসহ এমন কিছু উপাদান ছিল, যা আবহাওয়া গবেষণায় কাজে লাগে না৷ দু’পক্ষের দাবি পাল্টা দাবির মধ্যেই বেলুনটি গুলি করে নাময় মার্কিন প্রশাসন৷ এখন প্রশ্ন হলো, বিভিন্ন ইস্যুতে অস্বস্তিতে থাকা সিনো-মার্কিন সম্পর্ক এখন কোন দিশায় এগোবে? এবার কি স্নাযুযুদ্ধে জড়াতে চলেছে দুই শক্তিধর দেশ?
এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে বেশকিছু বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, চিন-আমেরিকা চিপ বা সেমিকন্ডাক্টর যুদ্ধ, তাইওয়ান প্রণালিকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটন-বেজিংয়ের মনোভাব, চিনের বর্তমান আর্থিক অবস্থান, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে চিন ও আমেরিকার প্রভাব কতটা ইত্যাদি। এই এত সমস্যার মাঝে বেলুনকাণ্ড যে দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করার প্রচেষ্টায় কিছুটা হলেও বাধা সৃষ্টি করেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
ইতিমধ্যেই বেলুন ধ্বংস নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে চিন৷ পেন্টাগনের এই কাজে স্বভাবতই না-খুশ ড্রাগন ভূমি। বেজিং বলেছে, আমেরিকা যা করেছে তার ফল ভুগতে হবে। কড়ায়গণ্ডায় চিন এর জবাব দেবে। বেজিংয়ের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্রের হুঁশিয়ারি, নাগরিক বিমান ব্যবহার করে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এই অবস্থায় অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের চিন সফর বাতিল দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শীতল করবে।
তবে এই মুহূর্তে চিন কিছুটা আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় জিরো কোভিড নীতি দেশটির অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তার জেরেই বিশ্বজুড়ে চিনের প্রভাবও কিছুটা কমেছে৷ ফলে হারানো আসন পুনরুদ্ধারে আমেরিকার সঙ্গে মিত্রতা না থাকুক, শত্রুতা না করাই শ্রেয় বলে কূটনৈতিক মহলের অভিমত। এতে চিনের সেমিকন্ডাক্টর শিল্প থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতে পারে। একই সঙ্গে অন্যান্য কিছু বিষয়েও চিন নিশ্চিত হতে পারত। বিশেষ করে আমেরিকার বাজারেও আরও বেশি করে ঢুকে পড়ার সুযোগ পেত। কেবল আমেরিকা নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেও তুলনামূলক বেশি প্রবেশাধিকার পেত চিন।
এদিকে চিন এবং রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে, চিনের উপর পশ্চিমী দুনিয়া আস্থা না রাখলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। মস্কো-বেইজিং সম্পর্কের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, চিন চায় বিশ্বে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করতে এবং সেই অবস্থান আমেরিকার বিশ্বব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করে৷ এই জায়গায় চিন-রাশিয়ার লক্ষ্য এক বিন্দুতে মিলিত হয়েছে৷ যা ভালো নজরে দেখছে না আমেরিকা৷ তাছাড়া তাইওয়ানকে নিয়েও চিন আমেরিকার মধ্যে উষ্ণ স্রোত বইছে৷ তবে শীঘ্রই হয়তো যুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা নেই৷ বেলুন কাণ্ডের জেরে এখনই মৈত্রির ফুল ছেড়ে যুদ্ধের অস্ত্র হাতে তুলে নেবে না দুই দেশ৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>