নয়াদিল্লি: যতদিন এগোচ্ছে ততো বেশি করে যেন জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন কৃষি আইন পাশ হওয়ার পর সেই যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল তা এখনো বর্তমান এবং আগামী দিনে আরো বড় আকার ধারণ করবে বলেই অনুমান। কৃষকদের দাবি, এই আইন প্রত্যাহার করতে হবে, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বৈঠক করবেন তারা। দফায় দফায় ইতিমধ্যেই বৈঠক হয়েছে কিন্তু এই বিষয়ে কোনো রকম রফাসূত্র মেলেনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করার পরেও সরকারের সিদ্ধান্তই তিনি অনড়, তাই কৃষকরাও নিজেদের অবস্থানে রয়ে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে ফের একবার আলোচনার কথা বললেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনি দাবি করলেন, কৃষকদের কথা শুনতে সর্বদা প্রস্তুত সরকার, আলোচনায় কোনরকম দ্বিধা নেই।
কৃষক আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, কৃষি ক্ষেত্র এমন একটা ক্ষেত্র যেখানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সেই ভাবে কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি, বরং বিগত কয়েক মাস ধরে কৃষিক্ষেত্রে ভালো কাজ হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষকরা যে আন্দোলন করছেন সেই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে অবশ্যই প্রস্তুত। কৃষকদের কথা শুনতে সরকার আগ্রহী। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং আলোচনার কথা আরো একবার বললেও কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য প্রধান নেতৃত্বদের কথায় একবারও আলোচনা প্রসঙ্গ আসছে না। উল্টে বেশিরভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দল এই কৃষি আন্দোলনকে সমর্থন করায় বিজেপির পক্ষ থেকে একাধিক কটাক্ষ করা হচ্ছে। কেউ দাবি করছেন, এই আর কৃষকদের আন্দোলন নেই, মাওবাদী এবং বামপন্থীরা এই আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে। অন্যদিকে কেউ বলছেন, খালিস্তানি এবং দেশদ্রোহীরা এই আন্দোলনে শামিল হয়ে দেশকে ভুল পথে পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। সব মিলিয়ে দেশজুড়ে শুরু হওয়া কৃষক আন্দোলনের পরিস্থিতি যথেষ্ট জটিল।
We are, however, always willing to listen to our farmer brothers, alley their misgivings and provide them with assurances we can provide. Our Government is always open to discussion and dialogue: Defence Minister Rajnath Singh
— ANI (@ANI) December 14, 2020
উল্লেখ্য, ১৯ দিনে পড়ল কৃষি আইন বিরোধী আন্দোলন। ইতিমধ্যেই রাজধানী দিল্লির রাস্তা আটকানো থেকে শুরু করে টোল প্লাজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি না মানা হলে আরো গুরুতর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে আন্দোলনকারীদের তরফে। এই কৃষি আন্দোলনে ইতিমধ্যেই সামিল হয়েছেন পাঞ্জাবের একাধিক তারকারা, যেসব জায়গায় কৃষকরা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন সেই সব জায়গায় তাদের উপযুক্ত খাবার দেওয়া থেকে শুরু করে একাধিক নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যোগান দেওয়ার কাজে যুক্ত হয়েছেন প্রচুর মানুষ। তবে এই আন্দোলনের জন্য যাতে কোনভাবে দিল্লি অবরুদ্ধ না হয়ে যায় সেই ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গুরুগ্রাম এবং ফরিদাবাদে সাড়ে তিন হাজার পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে অবশ্য কৃষক আইনের পক্ষেই অনড় থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখনো বলে চলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের সঙ্গেই রয়েছে এবং তাদের পাশে থাকতেই বদ্ধপরিকর। একইসঙ্গে কৃষকদের উদ্দেশ্যে তিনি বার্তা দিয়েছেন, কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিতে সহায়তা করবে এই নয়া কৃষি আইন। যদিও কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকারের এইরূপ দাবি মানতে কখনই রাজি নয়।