অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার ধ্রুবকে উড়ানে ফের ছাড়পত্র দিল ভারতীয় সেনা। একের পর এক দুর্ঘটনার জেরে মে মাসেই ধ্রুব হেলিকপ্টারের ব্যবহার সেনার তরফে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুর্ঘটনার প্রায় এক মাসের মাথায় সেগুলিকে ব্যবহারের জন্য ফের অনুমতি দিল ভারতীয় সেনা। তবে এই ছাড়পত্রটি অবশ্য শর্ত সাপেক্ষ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র সীমিত এবং জরুরি অপারেশন’ চলাকালীনই এইচএএল ধ্রুব- ব্যবহারে অনুমতি মিলেছে।
বিগত কয়েক বছরে সেনার জন্য ক্রমশ ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ধ্রুব হেলিকপ্টার। গত ২০ বছরে দেশে ২৪টিরও বেশি ধ্রুব হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ার খবর মিলেছে। চলতি বছর তিনটি ঘটনার শিকার হয়েছে এই হেলিকপ্টার।
প্রথম দুর্ঘটনা ঘটে ৮ মার্চ, যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে ‘ধ্রুব’কে আরব সাগরে জরুরি অবতরণ করানো হয়।
২৬ মার্চ, কেরালায় ধ্রুব হেলিকপ্টারের জরুরি অবতরণ হয়।
৪ মে, জম্মু ও কাশ্মীরের কিস্তাওয়ারের কাছে নদীর ধারে ভেঙে পড়ে এই অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার। মৃত্যু হয় হেলিকপ্টারে থাকা টেকনিশিয়ানের।
এই ঘটনার পর থেকেই সমস্ত ‘ধ্রুব’ হেলিকপ্টারকে ‘গ্রাউন্ড’ করে দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। এর আগে মার্চ মাসে পরপর দুর্ঘটনার জেড়ে নৌবাহিনী ও উপকূলরক্ষী বাহিনীও ধ্রুব হেলিকপ্টারগুলিকে ‘গ্রাউন্ড’ করে দেয়। তবে, মে মাসের দুর্ঘটনার প্রায় একমাসের মাথায় ফের ধ্রুব হেলিকপ্টার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর কাছে ধ্রুব অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার অত্যন্ত প্রয়োজনের। উচ্চ উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এই হেলিকপ্টার সিয়াচেন ও লাদাখের মতো প্রতিকূল জায়গায় দায়িত্বরত সেনাদের সেবায় ব্যবহার করা হয়।
ALH ধ্রুব হল হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) থেকে দেশীয়ভাবে তৈরি টুইন ইঞ্জিনের বিমান। HAL ১৯৮৪ সালে ধ্রুবের বিকাশ শুরু করে। যা প্রাথমিকভাবে ডিজাইন করেছিল এক জার্মান সংস্থা। ১৯৯২ সালে প্রথমবার উড়লেও সার্টিফিকেশনের পর ২০০২ সাল থেকে পরিষেবা দেওয়া শুরু করেছে ALH ধ্রুব। প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক অ্যাডভানস এই কপটার। দুজন পাইলট দ্বারা চালিত এই হেলিকপ্টারে ১২ জন বসতে পারেন।
৫২.১ ফুট লম্বা ধ্রুব হেলিকপ্টারের উচ্চতা ১৬.৪ ফুট।
সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২৯১ কিলোমিটার।
৬৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবিরাম উড়তে পারে।
৮টি অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল, ৪টি এয়ার টু এয়ার মিসাইল বহন করার ক্ষমতা রয়েছে ALH ধ্রুব – এর।
কিন্তু বর্তমানে, যান্ত্রিক ত্রুটি ও একের পর এক দুর্ঘটনার জেরে এর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে সেনাবাহিনীর কাছে ১৪৫টি, বিমান বাহিনীর কাছে ৭০টি, নৌ-বাহিনীর কাছে ১৮টি, কোস্ট গার্ডের কাছে ২০টি ধ্রুব হেলিকপ্টার আছে। এর মধ্যে যেগুলি উড়ানের উপযোগী পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেগুলিকেই জরুরীকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় সেনা।