আমদাবাদা: করোনা পরিস্থিতির মধ্যে লকডাউন চলাকালীনই বহু বাড়িওয়ালা বাড়ি ছাড়ার নোটিস দেওয়ায় তাঁদের পিজি বা ভাড়া থাকা নার্সরা বাসস্থান সমস্যায় ভোগার কথা সকলের জানা৷ তবে শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতে না পারার ঘটনা এই প্রথম৷ করোনা থেকে সেরে ওঠার পরও এক নার্সকে ঘরে ফিরিয়ে নিতে চাইলেন না তাঁর স্বামী৷ এখানেই শেষ নয়, ঘরে ফিরতে গেলে ওই নার্সকে ১০ লক্ষ টাকা ‘জরিমানা’ দিতে হবে বলেও শর্ত দেন স্বামী৷ বারবার আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে নেওনয়ার চেষ্টা করলেও ওই নার্সের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়েননি। ফলে শেষ পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দায়ের করতে হয় ওই নার্সকে।
আমদাবাদের ইসানপুর এলাকার বাসিন্দা বছর সাতাশের ওই নার্স মণিনগরে এলজি হাসপাতালে কর্মরত। করোনার মতো অতিমারি দেশজুড়ে মাথাচাড়া দেওয়ার আগে গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি খোখরা এলাকার এক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ওই মহিলা। হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলেই, সম্ভবত তিনিও আক্রান্ত হয়ে পড়েন। গত বছরই এপ্রিল মাসে তাঁর করোনা ধরা পড়ে। তখনও তাঁর স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁর পাশে দাঁড়াননি৷ ওই নার্স শনিবার আহমেদাবাদের খোখরা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে বলেন, ২০২০ সালের এপ্রিলে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর স্বামী তাঁকে প্রায় ত্যাগ করেন।
তবে শুধু করোনার জন্য নয়, বিয়ের পর থেকেই তাঁর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে নির্যাতন করতেন। এমনকী তিনি হাসপাতাল থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়িতে বয়ে আনতে পারেন, এই বলে করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে নার্সের কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। তাঁর বিয়ের মাস দেড়েক পরেই দেশজুড়ে করোনা থাবা বসায় । সেই অবস্থায় শ্বশুরবাড়ির চাপ উপেক্ষা করেই কর্তব্যের জন্যই তিনি নিজেকে হাসপাতালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত রেখেছিলেন। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেননি স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যরা।
এপ্রিলে করোনা ধরা পড়ার পর সেরে উঠলেও ওই নার্সকে আর বাড়িতে নিতে চাননি তাঁর স্বামী। শ্বশুরবাড়িতে ফেরার ছাড়পত্র হিসেবে দেওয়া হয় শর্ত৷ বাপের বাড়ি থেকে ১০ লক্ষ টাকা ‘পণ’ নিয়ে এলে, তাঁকে শ্বশুরবাড়িতে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। এমনকী বাড়ির সদস্যদের মধ্যস্থতায় তিনি স্বামীর সঙ্গে সব সমস্যা মিটিয়ে নিয়ে একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করলেও তাঁর ননদ বাগড়া দেন বলে অভিযোগ। তাঁর ননদ নিজেও একজন নার্স। তিনি দাবি করেন, সদ্য করোনা পরীক্ষা করার শংসাপত্র দিলে তবেই শ্বশুরবাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে। কিন্তু অভিযোগকারী নার্স নতুন করে কোনও করোনা পরীক্ষা করাতে রাজি হননি। ফলে সমস্যা মেটেনি৷ এমনকী ওই নার্সকে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা দায়ের করতে বলেন তাঁর স্বামী। পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পর গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। এখনও পর্যন্ত নার্সের শ্বশুরবাড়ির তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।