ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চায়ের দোকান খুলল মেধাবী, ঋণের বোঝা ২ লক্ষ টাকা

ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন, পড়তে গিয়ে ব্যাঙ্কে ঋণ নিতে হয়েছিল। সেই ঋণের বোঝা বাড়ছিল উত্তরোত্তর। ১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকার ঋণ এখন ২ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু এখনও চাকরি জোটেনি। পরিবারের রোজগার আসে একমাত্র যাঁর জন্যে সেই বাবাও বর্তমানে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই শেষমেশ ফুটপাথে চা বেচেই দিন চালাতে বাধ্য হচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের সঞ্জু কুণ্ডু।

 

পূর্ব বর্ধমান: ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন, পড়তে গিয়ে ব্যাঙ্কে ঋণ নিতে হয়েছিল। সেই ঋণের বোঝা বাড়ছিল উত্তরোত্তর। ১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকার ঋণ এখন ২ লক্ষ টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু এখনও চাকরি জোটেনি। পরিবারের রোজগার আসে একমাত্র যাঁর জন্যে সেই বাবাও বর্তমানে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই শেষমেশ ফুটপাথে চা বেচে সংসার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানের মেধাবী সঞ্জু কুণ্ডু।

সঞ্জু মাধ্যমিক পাস করেছিলেন ২০১৩ সালে। সেখানে তিনি স্টার নম্বর পেয়েছিলেন। প্রথম থেকেই মেধাবী সঞ্জু৷ ২০১৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বসে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায়, সেখানেও অভাবনীয় ফল করেন তিনি। জলপাইগুড়ি জেলার সরকারি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্যে ভর্তি হন সঞ্জু। সুঞ্জুর বাবা পেশায় আলু বিক্রেতা ফলে পড়াশোনা ও হস্টেল খরচ সামলাতে পারছিলেন না। তাই ২০১৬ সালে মন্তেশ্বর বাজারের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকার শিক্ষা লোন নেন সঞ্জু।

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তরফে বলা হয়েছিল, চাকরি পাওয়ার পর সেই ঋণ শোধ করতে পারবেন সঞ্জু। কিন্তু দু'বছর আগে সঞ্জুর বোনের বিয়ে ঠিক হয়। সেখানেও প্রচুর খরচ হয়, তাই ব্যাঙ্কের বকেয়া মেটাতে পারেনি সঞ্জু। এদিকে সঞ্জুর বাবা নবকুমার কুণ্ডুও এখন অসুস্থ। কাজ করতে পারছেন না। ঋণ বাড়তে বাড়তে ২ লক্ষ টাকা হয়েছে বর্তমানে। অগত্যা চাপে পড়ে চায়ের দোকান খুলতে বাধ্য হয়েছেন সঞ্জু।

ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করে ২০১৯ সালে উত্তীর্ণ হন সঞ্জু। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই একাধিক সংস্থায় আবেদন করেছেন, বিভিন্ন অনলাইন পরীক্ষাও দিয়েছেন কিন্তু চাকরি জোটেনি তাঁর। এদিকে গত জুলাই মাসে বাজারে সবজি বিক্রি করতে করতে ‘সানস্ট্রোক’ হয় তাঁর বাবা নবকুমার বাবু'র। বর্তমানে কিছুটা সুস্থ হলেও কাজ করতে পারছেন না তিনি। পাশাপাশি দ্রুত ঋণ শোধ করার জন্য আইনি চিঠি পাঠানোর কথা বলেছে ব্যাঙ্ক।

এককালীন আট হাজার টাকা জমা করার পর, সঞ্জুর সঙ্গে ব্যাঙ্কের দু’হাজার তিনশো টাকা করে মাসিক কিস্তির কথা হয়। কিন্তু সংসার খরচ, চিকিৎসার খরচ সামলে কিস্তির টাকা জোগাড় করতে কালঘাম ছুটেছে সঞ্জুর। তাই কোনও উপায় না পেয়ে মাসখানেক আগে মন্তেশ্বরের মালডাঙ্গা রাস্তার ধারে ফুটপাতেই চায়ের দোকান খোলেন সঞ্জু। তাঁর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে চাকরি পাওয়ার পরেই ঋণ শোধ করে দেব। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে চায়ের দোকান খুলতে বাধ্য হলাম! এখন কিভাবে টাকা শোধ করব, সংসার কিভাবে চালাবো, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ স্থানীয় বিধায়ক সৈকত পাঁজা এ ব্যাপারে সঞ্জুর পাশে থাকবার আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে কিস্তি শোধের সময় বাড়ানোর আর্জি করবেন বলে জানিয়েছেন সৈকত বাবু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × four =