কিছুতেই সারছে না কাশি, অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপে বাড়ছে ফুসফুসের ভয়ঙ্কর রোগ

কিছুতেই সারছে না কাশি, অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপে বাড়ছে ফুসফুসের ভয়ঙ্কর রোগ

d5f0044377c05198b71fa7438b0cd274

কলকাতা:  করোনার চোখরাঙানি খানিক কমলেও ভাইরাসের হাত থেকে যেন নিস্তার নেই৷ রূপ বদলে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাস৷ ভাইরাসের রূপ বদলের জন্যেই  পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে না অনেক শিশু।

আরও পড়ুন- ‘করোনা’ এখনও উদ্বেগের বিষয়! হুঁশিয়ারি দিয়েই রাখছে WHO

চিকিৎসকরা বলছেন, অনেক সময় দেখা যাচ্ছে অ্যাডিনো ভাইরাসে  আক্রান্ত শিশুরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর তাদের ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেক সময় আবার ICU থেকে জেনারেল বেডে দেওয়ার পর শিশুদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সেই সময় কাউকে কাউকে আবার ভেন্টিলেশনে পাঠাতে হচ্ছে।

চিকিৎসকরা আরও জানাচ্ছেন, নতুন করে শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। অনেক চিকিৎসক বলছেন, করোনার মতো অ্যাডিনো ভাইরাসও ভ্যারিয়েন্ট বা রূপ বদলে শক্তিশালী হয়ে উঠছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, ‘‘যারা আইসিইউ থেকে বের হচ্ছে, তাদের অনেক ক্ষেত্রে অন্যান্য সংক্রমণ ফুসফুসকে আক্রমণ করছে। ২০১৮ তে যখন মহামারী হয়েছে, তখনও এরকম হয়েছিল। অসুখ সেরেও সারছে না৷’’ ফলে বাড়ির খুদে সদস্যদের নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে উদ্বেগ৷  

শিশুদের নিয়ে যখন বাবা-মায়েদের চিন্তার অন্ত নেই, তখন বড়দের ক্ষেত্রে কিন্তু নতুন এক সমস্যা মাথাচাড়া দিয়েছে। এমন অনেক রোগী আসছেন, যাঁরা প্রায় এক মাসের উপর কাশির সমস্যায় ভুগছেন। কফ সিরাপও তাঁদের কাশি কাবু করতে পারছে না৷ তাবে কি এবার শিশুদের পাশাপাশি, বড়রাও অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত? ফুসফুস বিশেষজ্ঞ পার্থসারথি ভট্টাচার্য এই সমস্যা দেখার পর খানিক অবাক৷ তিনি প্রথমসারির এক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘গত ২৫ বছর ডাক্তারি করছি, এমনটা দেখিনি। কাশি সারছেই না, কারণটাও ধরা পড়ছে না। বড়দের শরীরেও অ্যাডিনো ভাইরাস বাসা বেঁধেছে কি না, সেটা জানতে গেলে টেস্ট করতে হবে।’

অ্যাডিনোভাইরাস নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে, বেশ কিছু নির্দেশিকা জারি করেছে কলকাতা পুরসভা। স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে বলা হয়েছে, কোনও অসুস্থ শিশু পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এলে তার অভিভাবকদের কাছ থেকে শিশুটির অসুস্থতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে হবে মেডিক্যাল আধিকারিকদের। শারীরিক অবস্থা বুঝে মেডিক্যাল অফিসারদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, শিশুটির চিকিৎসা বাড়িতে রেখে হবে, না তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক স্বাস্থ্যকর্মী এবং আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেবেন। যদি কোনও শিশু অসুস্থ থাকে, তাহলে তাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসার বন্দোবস্তও করবেন। ওই নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, চিকিৎসকদের অনুমতি ছাড়া ফার্মাসিস্টরা যেন কোনওরতম ওষুধ বিক্রি না করেন৷ ল্যাবরেটরিতে শিশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর রিপোর্ট পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে৷ শিশুর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে বাড়িতে রাখা যাবে না৷ শিশু জ্বরে আক্রান্ত হলেই কাছের কোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অসুস্থ শিশুকে কোনও ভাবেই ওষুধ খাওয়ানো যাবে না।

কেউ অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা কী ভাবে জানা যাবে? এর জন্য PCR টেস্ট করাতে হয়। বেসরকারি সংস্থায় এই টেস্টের খরচ ৯ থেকে ২০ হাজার টাকা। এই টেস্টের খবর বহন করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়৷ ফলে এই ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার উপরেই অধিক জোর দিতে বলছেন চিকিৎসকরা।