অনলাইন ক্লাসের ফাঁকে বাড়ছে গেমের আসক্তি? সচেতন হতে হবে অভিভাবকদের

সম্প্রতি এক নামী স্কুলের একজন পড়ুয়ার আচার আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা দেওয়ায় বিচলিত হয়ে পড়েন বাড়ির লোক। ওই কিশোরের ফোন ছাড়া এক মুহুর্তও চলে না। এক রাতে বাবার থেকে বকুনি খাওয়ার পর পরের দিন সকালে ছাদের কার্নিশ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করে অষ্টম শ্রেণির ওই কিশোর। শেষ মুহুর্তে মা এসে পরায় শেষরক্ষা হয়।

 

কলকাতা ও দুর্গাপুর: লকডাউনের ফলে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় একমাত্র ভরসা এখন অনলাইন মাধ্যম। কিন্তু এর ফলে বর্তমানে শিশু-কিশোরদের মধ্যে একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ যার নাম 'গেমিং ডিসঅর্ডার'। এর ফলে শিশু ও কিশোররা মোবাইল ফোনের ওপর আসক্ত হয়ে পরছে ক্রমশ। বদলে যাচ্ছে তাদের আচার আচরণ। এমনকি হাতে মোবাইল থাকায় অনলাইনে অশালীন সাইটে ঢুকে পরাটাও এখন সহজ হয়ে গিয়েছে। অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। শাসন করে নয়, বরং শিশুদের তাদের মতো করেই বোঝাতে হবে, বলছেন মনোবিদ বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি এক নামী স্কুলের একজন পড়ুয়ার আচার আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন দেখা দেওয়ায় বিচলিত হয়ে পড়েন বাড়ির লোক। ওই কিশোরের ফোন ছাড়া এক মুহূর্তও চলে না। এক রাতে বাবার থেকে বকুনি খাওয়ার পর পরের দিন সকালে ছাদের কার্নিশ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করে অষ্টম শ্রেণির ওই কিশোর। শেষ মুহূর্তে মা এসে পরায় শেষরক্ষা হয়। এরপর জানা গিয়েছে, পড়াশোনা করার জন্যই তৈরি হয়েছিল একটি অনলাইন চ্যাট গ্রুপ। সেখানে কয়েকদিন ধরেই অশালীন ছবি ও লিঙ্ক আসছিল। শিক্ষক শিক্ষিকারা এই ব্যাপারে জানতে পারায় দ্রুত ব্যবস্থা নেন।

টানা ৫ মাস গৃহবন্দি থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই ক্লাসঘর কিংবা বন্ধুবান্ধবদের থেকে দূরত্ব বেড়েছে শিশু-কিশোরদের। শোনা গিয়েছিল, তাদের অনেকেই মানসিক অবসাদের শিকার হচ্ছে। এর ফলেই স্মার্ট ফোনের ওপর ঝোঁক বেড়ে গিয়েছে। অনলাইন গেমের প্রতি আসক্ত হয়ে বিভিন্ন অসাধু চক্রের দ্বারা শিকার হওয়ার খবরও প্রকাশ্যে এসেছে। এই সমস্ত কারণে বিভিন্ন স্কুল তাদের পড়ুয়াদের ব্যস্ত রাখার জন্য এক্সট্রা ক্যারিকুলার অ্যাক্টিভিটির ওপর জোর দিয়েছে। দুর্গাপুর হেমশীলা স্কুলের অধ্যক্ষা অনিন্দিতা হোম চৌধুরীর কথায়, 'বহু পড়ুয়া অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এটা বন্ধ করতে আমরা ওয়েলনেস সেশন নামে একটা ক্লাস শুরু করেছি। সেখানে বাচ্চাদের সঙ্গে শিক্ষকরা কথা বলেন। গান, আবৃত্তি, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এ ভাবে যতটা সম্ভব বাচ্চাদের অন্য দিকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছি।'

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ওমপ্রকাশ সিংয়ের অভিজ্ঞতা, 'গত কয়েক মাসে সন্তানদের অনলাইন আসক্তি নিয়ে আমার সঙ্গে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের যোগাযোগ বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। একেবারে ৯-১০ বছর থেকে শুরু হচ্ছে সমস্যা।' এর সমাধান হিসাবে অভিভাবকদের নজরদারি একমাত্র উপায়। কিন্তু বাস্তবে এটা আদৌ কতটা সম্ভব তা স্পষ্ট নয় কারোর কাছেই। কেননা, সন্তানদের পড়াশোনার জন্য হয়ত খুব কষ্ট করেই একটি স্মার্ট ফোন কিনেছেন অভিভাবক। সেক্ষেত্রে কোন সাইট লক করতে হবে বা কিভাবে মনিটর করতে হবে সে সম্পর্কে জানা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এদিকে নজরদারি ছাড়া অন্য কোনও উপায়ও নেই।

মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল জানিয়েছেন, তাঁর নিজের শিশুকন্যাও অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত হয়েও চোখের আড়াল হলেই অনলাইন গেম খেলতে শুরু করে। তাঁর কথায় শিশুদের মেরে ধরে বোঝালে তারা কখনওই বুঝবে না, বরং আদর করে শিশুদের তাদের মতো করেই বোঝাতে হবে, এটাই কাউন্সেলিং। অভিনব ভারতী স্কুলের এক অধ্যক্ষা শ্রাবণী সামন্তের কথায়, ‘‘আমরা বাচ্চাদের হাতে ফোন দিতে মানা করতাম, আর আজ পরিস্থিতির চাপে আমাদেরই সেই ফোনেই পড়াতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোই একমাত্র পন্থা।’’ সেন্ট্রাল মডার্ন স্কুলের অধ্যক্ষ নবারুণ দে জানিয়েছেন, পড়ুয়ারা মা বাবার উপস্থিতিতেই যাতে অনলাইন ক্লাস করতে পারে, সেই হিসাবেই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ক্লাসের। রামমোহন মিশন স্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, নবম দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের সমস্যার কথা তাদের অভিভাবকরা বলছেন, তাই অনলাইনেই স্কুলের তরফে তাদের কাউন্সেলিং এর কথা ভাবা হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

10 − four =