ইসলামাবাদ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে তুমুল গলা ফাটালেন পাকিস্তানের প্রাক্তন হাইকমিশনার৷ পাকিস্তানের একটি প্রথমসারির সংবাদমাধ্যমে কলম ধরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করলেন পাকিস্তানের প্রাক্তন হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত৷ মমতার সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতিচারণা করে লেখেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা দিদি ভারতের একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী যিনি ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী দলকে এখনও পর্যন্ত দাঁড় করিয়ে রেখেছেন৷’’
২৭ মার্চ থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের শুরু৷ বাংলার ৮ দফা নির্বাচন ২৯ এপ্রিল শেষ হবে৷ নির্বাচনের ফল প্রকাশ ২ মে৷ ইতিমধ্যেই বাংলার মাটিতে ভারতীয় জনতা পার্টিকে রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদবের মতো নামজাদা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা৷ তার মাঝেই মমতার লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সমর্থনে দাবি করেছেন আব্দুল বাসিত৷ তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমি মার্চ ২০১৪ সাল থেকে আগস্ট ২০১৭ সাল পর্যন্ত নয়াদিল্লিতে পাকিস্তানের হাইকমিশনার হিসেবে ছিলাম৷ সেই সময়ে আমি ২ বার পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা সফরে গিয়েছিলাম৷ ২০১৫ সালের মার্চ মাসে প্রথমবার সফরে গিয়েই আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করার সুযোগ পেয়েছিলাম৷ ওই বৈঠক আমি সারাজীবন মনে রাখব৷ কেবল দিদির বিনয়ই নয়, তাঁর তীক্ষ্ণ রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তা আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল।’’
তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের বৈঠক প্রায় একঘণ্টা চলেছিল৷ আমি ওনাকে পাকিস্তান ও ভারতের তৎকালীন সম্পর্ক সম্বন্ধে জানিয়েছিলাম৷ সেই সময় দুই দেশের মধ্যে বহু দিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে উন্নতি করার চেষ্টা করেছিলাম, তা আমার কাশ্মীরি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরই ভেস্তে দেওয়া হয়। তাও আবার ভারতের বিদেশ সচিবের পাকিস্তান সফরের কয়েকদিন আগেই৷ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এই কঠোর সিদ্ধান্ত পাকিস্তান সরকারকেও অবাক করেছিল৷ আমরা কখনওই আশা করতে পারিনি, কাশ্মীরি নেতাদের সঙ্গে আমাদের বৈঠককে ভারত সরকার এত বড় একটা ইস্যু বানাবে৷’’
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু অঞ্চলে বিজেপি ৮৭টি আসনের মধ্যে ২৫টি আসনে জয়লাভ করে৷ এরপর ঐতিহাসিকভাবে প্রথমবারের মতো জম্মু-কাশ্মীরে জোট সরকারে অংশীদার হয়৷ সেই কথা তুলে ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসা করে আব্দুল বাসিত জানিয়েছেন, ‘‘দিদি আমার প্রতিটি কথা ধৈর্য্য সহকারে শুনেছিলেন৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম বিরোধী হয়েও তাঁর বিরুদ্ধে একটাও খারাপ কথা বলেননি৷ এতে তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গিয়েছিল৷ সংক্ষেপে বলতে গেলে, তিনি নিজেকে একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে তৈরি করেছেন৷’’ জার্মানিতে থাকা পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত আব্দুল বাসিত আরও জানিয়েছেন, ‘‘মমতা দিদি আমাকে তার রাজ্যে উন্নয়নের পরিকল্পনা ও দরিদ্র মানুষের জীবনের তফাৎ গড়ে দেওয়া নিয়ে তাঁর ভাবনা সম্পর্কে জানিয়েছিলেন৷ তিনি আমার থেকে কলকাতা এবং করাচির মধ্যে সম্পর্ক ভালো করে পাকিস্তান ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার সম্ভাব্য পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করেন৷’’
প্রাক্তন পাকিস্তানি হাইকমিশনারের আরও বক্তব্য, ‘‘আমি এখন ইসলামাবাদে বসে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবারে জিতলে তিনি টানা তিনবারের জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হবেন৷ উনি একমাত্র রাজনীতিবিদ যিনি ভারতীয় জনতা পার্টির বিরুদ্ধে এখনও তার লড়াইটা জারি রেখেছেন৷ সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য একটি শক্তিশালী বিরোধিতার প্রয়োজন৷ পশ্চিমবঙ্গ একটি কঠিন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত৷ সেই রাজ্যের মানুষ তৃতীয়বারের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে আগ্রহী৷ তবে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কিছুটা কমেছে৷ আমি আশা করি, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে নয়, বৃহত্তর দেশের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে৷’’