এবার ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী দেওয়ার কথা বললেন আব্বাস সিদ্দিকী ! কতটা চাপে তৃণমূল?

এবার ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী দেওয়ার কথা বললেন আব্বাস সিদ্দিকী ! কতটা চাপে তৃণমূল?

নিজস্ব প্রতিনিধি:  লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই উত্তাপ বাড়ছে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রটি নিয়ে। ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে  হারানোর হুঙ্কার বহু আগেই দিয়েছেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী। এবার একই কথা বলতে শোনা গেল ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীকেও। একটি ভিডিওতে সোমবার আব্বাস সিদ্দিকীকে বলতে শোনা গিয়েছে,”ডায়মন্ড হারবারে যদি আমরা প্রার্থী দিই তাহলে তাঁকে আপনারা জেতাবেন তো? আমায় দেখে ভোট দেবেন আপনারা। জেতালে আমি প্রতি মাসে এখানে এসে আপনাদের সমস্যা শুনব। এক মাসের মধ্যে সমাধান করে দেব।”

স্বাভাবিকভাবেই আব্বাসের এই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা শুরু হয়েছে। কারণ আব্বাস ধর্মীয় নেতা হিসেবে ভোটে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছেন।‌ সেই সূত্রে আইএসএফ ডায়মন্ড হারবারে নওশাদ সিদ্দিকীকে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করলে, এবং তাতে আব্বাসের মতো ধর্মীয় নেতার সমর্থন থাকলে সেই নির্বাচন যে অন্য মাত্রা পাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এর কারণ একটাই, ডায়মন্ড হারবারের জনবিন্যাস। এই কেন্দ্রে ৫৩ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। আর বাঙালি  মুসলিমদের মধ্যে ফুরফুরা শরিফের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করে। তাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ফুরফুরা শরিফের যথেষ্ট প্রভাব থাকায় আব্বাস সিদ্দিকী যেভাবে ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছেন, তাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে বিশেষ বার্তা গেল বলেই মনে করা হচ্ছে। আর তাতে নিশ্চিত ভাবে তৃণমূলের উপর চাপ বাড়ল। কারণ নওশাদ যদি প্রার্থী হয়ে সংখ্যালঘু ভোটের একটা বড় অংশ কেটে নেন, তাহলে অভিষেক নিঃসন্দেহে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে পড়বেন। আর এটাও স্পষ্ট যে নওশাদ প্রার্থী হলে বাম-কংগ্রেসের সমর্থন পাবেন তিনি। তাই তৃণমূলের দুর্গ বলে পরিচিত হলেও ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিষেকের জয় পাওয়াটা ততটা সহজ হবে না বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

উল্লেখ্য একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই কিছুটা অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন আব্বাস। কিন্তু এবার নতুন করে আসরে নামলেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবার। এই কেন্দ্র থেকে পরপর দু’বার বড় ব্যবধানে জিতেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু দিন আগেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ডায়মন্ড হারবারে অভিষেককে হারানোর হুঙ্কার দিয়েছেন। একই ভাবে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী নিজেই ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তাঁকে হারানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। নওশাদ বলেছেন,”আমি ডায়মন্ড হারবারের বর্তমান সাংসদকে প্রাক্তন সাংসদ বানাব। দল অনুমোদন দিলে আমি ডায়মন্ড হারবার থেকে লোকসভা ভোটের জন্য লড়াই করব।” সেই সঙ্গে নওশাদের দাবি, অভিষেকের অনুগামী নেতাকর্মীদের একাংশ বহুদিন ধরেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। আর সেই সূত্রেই আইএসএফ বিধায়ক মনে করেন ডায়মন্ড হারবারে অভিষেকের হার কার্যত সুনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নওশাদের পাশাপাশি আব্বাস সিদ্দিকীও যেভাবে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে অভিষেককে হারানোর ডাক দিয়েছেন, তাতে রাজ্য রাজনীতির উত্তাপ যে বহুগুণে বেড়ে গেল সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।  

ঘটনা হল রাজ্য রাজনীতিতে  বারবার চর্চায় উঠে এসেছে অভিষেকের ডায়মন্ড হারবার ‘মডেল’। সেখানে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে, এই প্রচার বারবার করেছেন অভিষেকের পাশাপাশি তৃণমূল নেতৃত্ব। পাল্টা বিরোধীদের দাবি, সেখানে সন্ত্রাস করে ভোটে জেতে তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ডায়মন্ড হারবার জুড়ে ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে বলে বিরোধীদের দাবি। গত দুটি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বলছে ডায়মন্ড হারবার কার্যত তৃণমূলের দুর্গে পরিণত  হয়েছে। গতবার অভিষেক ডায়মন্ড হারবার থেকে ৩ লক্ষ ২০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। তবে বিরোধীদের দাবি, সুষ্ঠু ও অবাধ  নির্বাচন হলে গতবারই অভিষেক হেরে যেতেন। রিগিং করে অভিষেক জিতেছিলেন বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তাই আগামী লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় ভোট হলে অভিষেক হারবেন বলে দাবি বিরোধীদের। তাই নওশাদ যেভাবে অভিষেককে হারানোর ডাক দিয়েছেন, আর এবার যেভাবে তাতে সমর্থন দিলেন আব্বাস সিদ্দিকীও, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষিত হলে এবং ডায়মন্ড হারবারে সত্যিই নওশাদ যদি বাম ও কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে দাঁড়ান, তাহলে সেই কেন্দ্রের ফলাফলের দিকে যে সবারই নজর থাকবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *