উত্তাল রাজনীতির আবহে বেহাল অর্থনীতি! সাঁড়াশি চাপে নাভিশ্বাস কেন্দ্রের

উত্তাল রাজনীতির আবহে বেহাল অর্থনীতি! সাঁড়াশি চাপে নাভিশ্বাস কেন্দ্রের

3 stocks recomended

নয়াদিল্লি: বিভীষিকাময় ছিল ২০২০। দাবানল, মহামারী, সুপার সাইক্লোনের মতো একের পরে এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং লক্ষ লক্ষ প্রাণহানির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে ২০২০-র বছর। ২০২১ পড়তেই ফেলে আসা বছরের সমস্ত দুর্যোগ কাটিয়ে সুস্থ-স্বাভাবিক সুন্দর পৃথিবীর দেখার স্বপ্ন দেখছে বিশ্ববাসী। কিন্তু সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন বছরের শুরুতেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গোটা বিশ্ব তথা ভারতের কাছে, বিশেষত নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে ২০২১ সালটা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সহ বিভিন্ন দিক থেকে একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন তাঁরা।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, একেবারেই অমূলক নয়। ১৩০ কোটি দেশবাসীকে সুষ্ঠুভাবে করোনা টিকা বিতরণ বর্তমানে মোদী সরকারের কাছে সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা ভারতে ভ্যাকসিন সংরক্ষিত করে রাখার মতো কোল্ড চেনের ব্যবস্থা নেই। ফলে ভ্যাকসিন সংরক্ষিত করে রেখে তা সকলের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে পৌঁছে দেওয়াই এখন সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। 

দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিয়ে করোনা টিকাকরণের ব্যবস্থা করা নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁদের মতে, কোভিড টিকাকরণের জন্য এবছর একটা বড় অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ করতে হবে মোদী সরকারকে। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে সমগ্র দেশের পাশাপাশি বিশেষত গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নীতকরণের জন্য বিশেষ জরুরি। এদিকে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবায় মোটা অঙ্কের বাজেট বরাদ্দ করা অবশ্যই যে কোনও সরকারের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। 

নরেন্দ্র মোদী সরকারের তৃতীয় চ্যালেঞ্জ হল, দেশের অর্থনীতির নিম্নগামী হার। যদিও কেবল ভারত নয়, এটা সমগ্র বিশ্বের কাছে চ্যালেঞ্জ। তবে ভারতে বর্তমানে কেন্দ্রে রয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার। সংসদে সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায় দেশের বর্তমান নিম্নগামী অর্থনৈতিক পরিস্থিতির হারের দায় সরকারের ওপরই অধিকাংশে বর্তাচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের ব্যাঙ্কিং সেক্টর সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ভেঙে পড়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছে। ২০২০-২১  অর্থবর্ষে শেষ ৩ মাসে দেশের জিডিপি হার ৯.৫- এর উপরে উঠবে না। যা যথেষ্ট দুর্বল এটা কেন্দ্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে। 

চতুর্থত, দেশে বেকারত্বের সংখ্যা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত কোভিড পরিস্থিতিতে লকডাউনের ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের যে অবস্থা হয়েছে, তারা যেভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েছে, তাদের কাজের জোগান দেওয়া মোদী সরকারের কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। পঞ্চমত, নরেন্দ্র মোদী সরকারের নয়া তিনটি কৃষি আইনকে নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ যেভাবে বড় আকার নিচ্ছে তা কেন্দ্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।  ১১টি রাজ্যের হাজার হাজার কৃষক গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দিল্লিতে বিক্ষোভ অবস্থানে রয়েছে। যত দিন যাচ্ছে তাদের আন্দোলন আরও তীব্র হচ্ছে। যা নিয়ে ঘরে-বাইরে ক্রমাগত চাপের মুখে পড়ছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাই এই কৃষক আন্দোলনকে নিয়ন্ত্রণ করা নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। 

এছাড়া একুশেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, অসম ছাড়াও রয়েছে কেরল, তামিলনাড়ু ও পুদুচেরি। একদিকে যেমন পশ্চিমবঙ্গকে দখল করা, এনআরসি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে অসম ধরে রাখা কেন্দ্রের শাসকদলের অন্যতম লক্ষ্য, তেমনই দক্ষিণে প্রভাব বৃদ্ধি করাও তাদের কাছে অন্যতম রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ। আবার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বজায় রাখা, ইন্দো-আমেরিকা সুসম্পর্ক বজায় রাখাও নরেন্দ্র মোদী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। বিদায়বেলায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ভিসা, অভিবাসন নীতি নিয়ে যে কঠোর পদক্ষেপ করেছেন, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিডেনের সঙ্গে সমঝোতা করে সেটা শিথিল করানোও নরেন্দ্র মোদী সরকারের চ্যালেঞ্জ। 

আবার চলতি বছরই দেশের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হবে। সেই মঞ্চেই প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতিকে তুলে ধরতে চায় নরেন্দ্র মোদী সরকার। কিন্তু করোনা, লকডাউন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ বিভিন্ন কারণে বর্তমানে দেশের যা পরিস্থিতি, সেগুলি অতিক্রম করে ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের মঞ্চে দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের তাঁর সরকারের খতিয়ান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঠিকই কি তুলে ধরেন সেটাও দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 7 =