কলকাতা: কলকাতার এক নামী অভিনেতার আপ্তসহায়ক ছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাস খানেক আগে হঠাৎ করেই তাঁর আত্মহত্যার খবরে শোরগোল পড়ে যায়৷ তদন্তে নেমে চোখ কপালে ওঠে পুলিশের৷ তোলাবাজির এক ভয়ঙ্কর দিক প্রকাশ্যে উঠে আসে৷ যার নাম সেক্সটরশন৷ যা এক প্রকারের হানি ট্র্যাপ৷ যৌন সম্পর্কের টোপ দিয়ে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করে মোটা টাকা আদায় করে থাকে প্রতারকরা৷ শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে প্রতারণার এই ফাঁদ৷ সেক্সটরশনের ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের খাতায়৷ কিন্তু কী ভাবে এই ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়?
আরও পড়ুন- তাপমাত্রা বাড়লেও বিদায় নিচ্ছে না শীত, বৃষ্টির ভ্রুকুটি নিয়েই বাগদেবীর অপেক্ষায় রাজ্যে
এথিক্যাল হ্যাকার সাম্যজিৎ মুখোপাধ্যায় এই অপরাধের পর্দা ফাঁস করেছেন৷ প্রথমসারির এক সংবাদমাধ্যমে সেই রিপোর্ট সম্প্রচার করা হয়েছে৷ তিনি জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় পাতা হচ্ছে এই প্রতারণা চক্রের ফাঁদ৷ বেশ কয়েকটি ধাপের মধ্যে দিয়ে যায় প্রতারকরা৷ প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসে অচেনা ব্যক্তির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট৷ সেই রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে নিসেই শুরু হয় চ্যাট৷ গল্পের মাঝেই চাওয়া হয় হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর৷ প্রতারককে সেই নম্বর দিলেই আসতে শুরু করে ভিডিয়ো কল৷ সেখানে সরাসরি যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দেওয়া হয়৷ সেই ফাঁদে পা দিলেই বিপদ! ঠিক এই ভাবেই প্রতারকরা ফাঁদে ফেলতে চেয়েছিলেন সাম্যজিৎকেও৷
সকাল ১১টা নাগাদ সাম্যজিতের ফোনে ফোন করেন হ্যাকাররা৷ একটি মহিলা কণ্ঠ৷ কিছুক্ষণ কথা বলার পরেই শুরু হয় তাঁকে ফাঁদে ফেলার কৌশল৷ ভিডিয়ো কলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ কিছুক্ষণের মধ্যে ফের অডিয়ো কল৷ এর পর ফের আসে ভিডিয়ো কল৷ দেওয়া হয় কুপ্রস্তাব৷ ফোন রেকর্ড হয়ে বুঝতে পেরেই ফোন কেটে দেয় প্রতারক৷ সাম্যজিৎ বলেন, এদের ফাঁদে পা দিলে চরম বিপদ৷ কোনও ভাবে কেউ তাঁর যৌনাঙ্গ দেখিয়ে দিলেই প্রতারকরা সেই স্ন্যাপশট তুলে নেবে৷ তার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার পরিবারের সদস্য বা অফিস কলিগদের কাছে সেই ছবি পাঠিয়ে শুরু হবে ব্ল্যাকমেলিং৷
সাম্যজিৎ বলেন, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানোর সময়েই ওরা সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করে নেয়৷ অর্থাৎ আপনার পরিবারের সদস্য, অফিস কলিগ, কার কার সঙ্গে মেমরি শেয়ার করেছেন বা ফটো ট্যাগ করছেন সেগুলি দেখে নেওয়া হয়৷ সেই ক্লোজ ফ্রেন্ডদের কাছে আপনার আপত্তিকর ছবিগুলি পাঠাবে৷ এর পরেই শুরু হয় ব্ল্যাকমেলিংয়ের কাজ৷ চাওয়া হবে মোটা টাকা৷
পুলিশ জানাচ্ছে ভরতপুর গ্যাং নামে অপরাধীদের একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে৷ তারা ভয়ঙ্কর ভাবে এই কাজ করে চলেছে৷ পুলিশ অফিসারদের ছবি ডাউনলোড করে তারা ফেসবুক প্রোফাইল বানাচ্ছে৷ তার পর শুরু হয় প্রতারণা৷ হোয়াটসঅ্যাপে কল করে চাওয়া হয় মোটা টাকা৷ টাকা দিতে অস্বীকার করলেই শুরু হয় ব্ল্যাকমেলিং৷ ওই অভিনেতার আপ্তসহায়কও এমনই একটি গ্যাংয়ের ফাঁদে পা দিয়েছিলেন বলেই তদন্তে জানতে পারে পুলিশ৷ তাই নেটপাড়ায় সাবধান৷