নয়াদিল্লি: মাতৃ জঠরে বেড়ে ওঠা ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ আমাদের দেশে বেআইনি৷ কিন্তু, আইনের ফাঁক গলে বছরের পর বছর মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ হয়ে চলেছে৷ যার জেরে কমেছে কন্যা সন্তানের সংখ্যা৷ এই পরিস্থিতি বদলের জন্য প্রয়োজন ছিল কিছুটা সচেতনতা। আর অনেকটা সরকারি নজরদারি। এই দুইয়ের প্রভাবে নারী-পুরুষ লিঙ্গ অনুপাতে বেশ কিছুটা উন্নতি হয়েছিল পশ্চিমবাংলায়। ২০১১ সালের তথ্য অনুযায়ী, এ রাজ্যে প্রতি হাজার পুত্রসন্তানের নিরিখে কন্যাসন্তান জন্মানোর হার ছিল ৯৩৩৷ পরবর্তী সাত বছরে কন্যা সন্তান জন্মের হার বেড়ে ৯৪১ হয়। কিন্তু সেই সাফল্য ধরে রাখা সম্ভব হয়নি৷ স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সার্ভের রিপোর্ট বলছে, দেশের অন্যান্য ৯টি রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও ফের কমতে শুরু করেছে নারী-পুরুষের অনুপাত। ২০২০ সালে বাংলায় এই প্রতি হাজার পুরুষে নারীর অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৯৩৬-এ। তবে বৈষম্যের এই ছবি আরও বেশি করে প্রকট দিল্লি (৮৬০), মহারাষ্ট্র (৮৭৬), তেলঙ্গানা (৮৯২) ও উত্তরাখণ্ডে (৮৪৪)।
আরও পড়ুন- নবম থেকে দ্বাদশ ইস্যুতে কী বললেন এসএসসি চেয়ারম্যান?
এ রাজ্যের চিকিৎসকদের অনুমান, ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে গ্রামবাংলার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে শহর। উন্নত প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে শহরের শিক্ষিত মানুষ৷ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণের সুযোগ সুবিধা গ্রামের চেয়ে শহরেই বেশি। আইনের চোখে ধুলো দিয়ে কলকাতার অনেক চিকিৎসকই গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করে দিচ্ছেন৷ এমনকি ওই চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ কন্যাভ্রূণ হত্যা করতেও কুন্ঠা করছেন না।
যে সব ক্লিনিকে বেআইনি ভাবে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়, তাদের ধরাও সহজ নয়৷ কারণ, ওই সব ক্লিনিক প্রকাশ্যে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ সম্ভব নয় বলেই জানায় দম্পতিকে। অথচ পরে আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেয় রিপোর্ট। এমন অভিযোগ স্বাস্থ্যভবনে জমা পড়েছে ভুড়ি ভুড়ি৷ উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে এমন ক্লিনিকের সন্ধান মিলেছে, যেখানে রিপোর্টের খামে থাকে সাঙ্কেতিক ইঙ্গিত৷
জানা গিয়েছে, পেন বা পেনসিল দিয়েবরিপোর্টের খামের ফরে ইংরেজি হরফে ৬ বা ৯ লিখে দেওয়া হয়। এক আধিকারিক জানাচ্ছে, ‘এমন নম্বর দেখলে এক ঝলকে মনে হবে ক্লিনিকের কোনও সিরিয়াল নম্বর। কিন্তু বাস্তবে ওই নম্বরের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে ভ্রূণের লিঙ্গ। ৬-এর সঙ্গে ইংরেজি ছোটহাতের ‘বি’ এবং ৯-এর সঙ্গে ছোটহাতের ‘জি’ অক্ষরের সাদৃশ্য রয়েছে। এর থেকে বোঝা যায় কোনটা বয় আর কোনটা গার্ল৷ তিনি আরও জানান, অনেকেরই ধারণা, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি ক্লিনিকগুলিতেই বুঝি শুধুমাত্র ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু, তা নয়৷ কিছুটা ব্যয়সাপেক্ষ হলেও মায়ের রক্তের নমুনা থেকে ‘সেল-ফ্রি ফিটাল ডিএনএ’ টেস্টের মাধ্যমে কিংবা সিরিঞ্জের মাধ্যমে প্লাসেন্টা থেকে নমুনা নিয়ে তার পরীক্ষা করলেও নির্ভুল ভাবে বলে দেওয়া সম্ভব গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে৷
স্বাস্থ্যভবনের ওই আধিকারিকের কথায়, ‘লিঙ্গ নির্ধারণের এই প্রবণতা বাঙালির চেয়ে অবাঙালি পরিবারেই বেশি। আর কলকাতায় জেলার চেয়ে অবাঙালি পরিবার সংখ্যাও বেশি৷ তাই চোরাগোপ্তা এই অনৈতিক ও বেআইনি কাজটিও সবচেয়ে বেশি ঘটে চলেছে মহানগরেই৷’
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>