জ্বলছে ইরান, অধিকার হাসিল করতে পারবেন কি নারীরা?

জ্বলছে ইরান, অধিকার হাসিল করতে পারবেন কি নারীরা?

কলকাতা: একবিংশ শতাব্দীতে আর কোনও অংশেই পুরুষদের তুলনায় পিছিয়ে নেই নারীরা৷ যুগের স্রোতে গা ভাসিয়ে পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে তাঁরা। তবে এখনও কী প্রকৃত অর্থে স্বাধীনতা পেয়েছে নারীরা? সমাজ ভেদে নারীদের অধিকারের সীমারেখাও ভিন্ন৷ অনেক সমাজে তো তাদের অধিকারকেই অস্বীকার করা হয়৷

আরও পড়ুন- নতুন বছরে আরও তীব্র যুদ্ধের ঝাঁঝ, দনেৎস্কে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হানায় মৃত ৪০০ রুশ সেনা

নারী অধিকারকে যারা মান্যতা দিতে চায় না, তাদের মধ্যে অন্যতম হল ইরান৷ সে দেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নারী অধিকারের বিষয়টি৷ নিজেদের অধিকার রক্ষায় আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছেন সে দেশের মেয়েরা। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, সকলে এক যোগে সামিল হয়েছে এই বিক্ষোভে৷ তবে নারী বলে কোনও ছাড় নেই তাঁদের৷ কারণে-অকারণে আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ দেওয়া হচ্ছে কঠোর শাস্তি৷ অনেককে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। শুধু তাঁদেরই নয়, বিক্ষোভের কন্ঠরোধ করতে শান্তি দেওয়া হচ্ছে তাঁদের সমর্থকদেরও৷ 

১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লব হয়েছিল। তবে গত কয়েক দশকেও সেখানে ধর্মীয় নেতাদের তৈরি পোশাকনীতি বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়নি৷ ইরানি আইন অনুযায়ী, সে দেশটির মেয়েরা মাথা ও চুল ঢেকে রাখতে বাধ্য৷ রয়েছে পোশার ফতোয়াও৷ তাঁদের এমন লম্বা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে, যাতে শরীরের কোনও অংশের গঠন বোঝা না যায়। তবে ইরানে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণির বহু নারীই আঁটসাঁট পোশাক পরে থাকেন। কোট পরেন ঊরু পর্যন্ত৷ এমন উজ্জ্বল রঙের স্কার্ফ পরেন, যাতে মাথার চুল স্পষ্ট৷ 

ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান কর্তৃপক্ষ নারীদের রক্ষণশীল পোশাক পরা নিয়ে কার্যত ফতোয়া জারি করেছিল৷ ফলত, হিজাববিধি নিয়ে সেই তখন থেকেই ইরানের মাটিতে বোনা হয় বিরোধের বীজ৷ ইসলামি বিপ্লব শুরুর বছরগুলোতে নারীদের উপর ইসলামিক পোশাক পরার বিধি জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ ইসলামি বিপ্লবের অগ্রজ আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি ছিলেন চরম হিজাবপন্থী৷  বিপ্লবীরা তাঁদের নেতার মতাদর্শে দীক্ষিত হয়ে পথে ঘাটে যথাযথ পোশাক না পরা নারীদের ওপর চড়াও হতেন।

ইরানে বিক্ষোভকারী নারীদের উপর প্রথম থেকেই পুলিশি নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। মুসলিম প্রধান একটি দেশে নিজেদের অধিকারের জন্য পথে নামা নারীদের নিপীড়িত হয়ে হয়৷ ইরানে বিক্ষোভরত এক তরুণীকে আটকের সময় পুলিশি নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে যায়৷ 

ইরানে বিক্ষোভের সূত্রপাত মূলত হিজাবকে কেন্দ্র করে। এ দেশে ইসলামি অনুশাসন কঠোরভাবে অণুসরণ করা হয়। গোটা দেশের উপর নীতিপুলিশের নজরদারি৷ হিজাব পরাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনার মাঝে পুলিশের হাতে মৃত্যু হয় ২২ বছরের তরুণী মাহসা আমিনির। এর পরই বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে৷ সেই বিক্ষোভ সহিংস পন্থাতেই দমন করার কৌশল নিয়েছে সে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। যার জন্য গোটা বিশ্বে সমালোচনার মুখেও পড়েছে তারা৷ এত প্রতিরোধের মধ্যে লড়াই চালিয়ে ইরানি মেয়েরা তাঁদের অধিকার অর্জন করতে পারে কিনা, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন৷