কলকাতা: করোনা আবহে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে স্কুল বন্ধ আছে। স্কুল বন্ধের মধ্যেই মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরিয়েছে। এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হবে পড়ুয়ারা। এই বিষয়কে মাথায় রেখে নয়া সিদ্ধান্ত নিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। জানানো হয়েছে, একাদশ শ্রেণির ভর্তির প্রক্রিয়ার জন্য আগস্টে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ শতাংশ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের স্কুলে আসতে হবে। এই ঘোষণা হওয়ার পরেই শিক্ষক মহলে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: বিজেপি করব না, বাঁচব ফুটবলার পরিচয়ে! ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিজেপি ছাড়লেন মেহতাব
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, যতদিন একাদশ শ্রেণির ভর্তির প্রক্রিয়া চলবে, ততদিন ৫০ শতাংশ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মচারীদের স্কুলে আসতে হবে। প্রধান শিক্ষককে রোস্টার তৈরি করতে হবে। কেউ নিয়ম অমান্য করলে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে জানাতে হবে। তবে কারও বাড়ি কনটেইমেন্ট জোনের মধ্যে হলে তাদের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: আগামী ৩ দিন বন্ধ থাকবে ব্যাংক পরিষেবা, সিদ্ধান্ত ব্যাঙ্কার্স কমিটির
এই ঘটনায় শিক্ষক মহলের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, বর্তমানে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে আবার দুই দিন করে সপ্তাহে লকডাউন। এমতাবস্থায় এক দিন বা দুই দিন নয়, সম্পূর্ণ আগস্ট মাস স্কুলে যেতে হবে। আগস্ট মাস ধরেই একাদশ শ্রেণির ভর্তি চলবে। এটা অমানবিক সিদ্ধান্ত। অনেক শিক্ষক দূরে থাকেন। তাঁরা কীভাবে আসবেন তা নিয়ে শিক্ষক মহলের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে।
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে জানানো হয়েছে, লকডাউনের সময় স্কুলের পাশে থাকা শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকরা যেভাবে পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি মিড ডে মিল পৌঁছে দিয়েছিলেন, সেইভাবে মাধ্যমিকের মার্কশিট বিতরণ করা প্রয়োজন। তাতে সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব হত। শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে বাধ্যতামূলক নির্দেশ প্রত্যাহার করে চাল, আলু বিতরণের মতো করে একই ভাবে নির্দেশিকা দেওয়া হোক। কোথাও কোনো অসুবিধা হয়নি। মার্কশিট বিতরনের ক্ষেত্রেও কোন অসুবিধা হবে না। দূরদূরান্ত থেকে সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে হাজির হওয়ার নির্দেশিকা আরো সংক্রমণ ছড়াতে সাহায্য করবে।’’ মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘মিড মিলের চাল-ডাল-আলু বিতরণের মত স্থানীয় শিক্ষকদের নিয়ে এই কাজটি সম্পন্ন করা যেত৷ কিছু শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই অর্ডার বের করতে মধ্যশিক্ষা পর্ষদকে বাধ্য করা হয়েছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক৷ এর ফলে জেলার মধ্যে বা জেলার বাইরে স্কুল থেকে দূরবর্তী স্থানে যে সমস্ত শিক্ষকরা থাকেন তাঁরা সমস্যায় পড়লেন৷’’
এবিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘আমরা মনে করি করোনা আবহে পশ্চিমবঙ্গে যে উৎকণ্ঠার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে বিদ্যালয়গুলিতে সমস্ত শিক্ষক শিক্ষা কর্মী দের নিয়ে আসার চেষ্টা অত্যন্ত অমানবিক সিদ্ধান্ত।বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে এমন অনেক শিক্ষক- শিক্ষাকর্মী আছেন যারা বহুদূর থেকে বিদ্যালয় আসতে বাধ্য হন। তাদের এই পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা বাঞ্ছনীয় নয়। প্রতি মাসে চাল আলু সহ মিড ডে মিল ডিসট্রিবিউশন প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের কাছাকাছি থাকা শিক্ষকদের সহযোগিতায় যেভাবে সম্পাদন করছেন, একই পদ্ধতিতে দশম শ্রেণীর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মার্কশিট অভিভাবক দের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব। আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে অনুরোধ করছি তিনি যেন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন এবং সামগ্রিকভাবে বিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ বিষয় গুলি সম্পাদন করার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। প্রতিটি বিদ্যালয় তাদের নিজস্ব কর্মপন্থা অনুযায়ী শিক্ষক শিক্ষা কর্মীদের সাথে আলোচনা করে নিজেরাই সমস্যার সমাধান করে নিতে পারেন।’’