ঝাড়খণ্ড: কর্পোরেট দুনিয়ার দেখনদারিতে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন রাকেশ মোহান্তি৷ অসন্তুষ্টি থেকে আসছিল কাজের প্রতি প্রবল ঔদাসীন্য৷ ৩০ বছরের রাকেশ এটা অনুভব করেছিলেন, ওই দুনিয়া তাঁর জন্য নয়৷ যে কাজের প্রতি ভালোবাসা নেই সেই কাজে তিনি কোনও দিনই সফল হতে পারবেন না৷ ঝাঁ-চকচকে দুনিয়া নয়, তাঁর মনপ্রাণ জুড়ে ছিল সোঁদা মাটির গন্ধ৷
পৈতৃক সম্পত্তি হিসাবে ২০ একর জমি পেয়েছিল মোহান্তির পরিবার৷ উত্তরাধিকারের অপেক্ষায় দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থাতেই পড়েছিল জমিটি৷ অবশেষ দেখা মিলল উত্তরাধিকারের৷ সব কিছু ছেড়েছুড়ে এই জমিতে চাষাবাদ শুরু করলেন রাকেশ৷ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সবুজে ভরিয়ে তোলেন পূর্বপুরুষের ফেলে রাখা এই জমি৷ শুধু নিজের স্বপ্ন পূরণই নয়, তাঁর এই কাজে উপকৃত হন ঝাড়খণ্ডের পাতামদা ব্লকের কৃষিজীবীরাও৷
২০১৭ সালে প্রাথমিকভাবে কমিউনিটি ফার্মিং গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তৈরি করেন সামাজিক সংগঠন ‘ব্রুক এন ব্রিস’৷ স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শুরু করেন জৈব ফসল বা অর্গানিক শস্যের চাষ৷ জমি থেকে শুরু করে পুঁজি, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি সবকিছুই কৃষকদের সঙ্গে ভাগ করে নেন এই কমিউনিটির সদস্যরা৷
রাকেশ বলেন, ‘‘আমি গ্রামের ছেলে৷ তাই আবহাওয়া পরিবর্তন, জলের ঘাটতি, রাসায়নিক যুক্ত খাবার, উৎপাদনের থেকে কম আয় এই সকল বিষয়গুলি আমার কাছে খুব স্পষ্ট৷ আমি চাইতাম আমার গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নতি হোক৷ এদিকে আমার চাকরি নিয়েও সন্তুষ্ট ছিলাম না আমি৷ তাই তলপি-তলপা নিয়ে ফিরে আসি গ্রামের বাড়িতে৷ শুরু করি কৃষিকাজ৷ প্রথমে ভেবেছিলাম কিছুদিনের জন্য চাষবাস করব৷ কিন্তু এখানকার সমস্যাগুলো জানার পর পাকাপাকিভাবে এখানে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই৷’’
বর্তমানে প্রায় ৮০ জন কৃষক ‘ব্রুক এন বিস’ ফার্মের সদস্য৷ রাকেশ এবং স্থানীয় কৃষকদের জমি মিলিয়ে প্রায় ৫০ একর জমির উপর চলছে অর্গানিক শস্যের চাষ৷ প্রতি মাসে নির্দিষ্ট বেতনের পাশাপাশি মুনাফার ১০ শতাংশও পান কৃষকরা৷ ফসল বিক্রি নিয়েও আর মাথা ঘামাতে হয় না তাঁদের৷ নেই পরিবহন বাবদ খরচের দায়৷ সময় মতো উৎপন্ন ফসল পৌঁছে যায় বাজারে৷ সব দায়ভার শুধুই রাকশের৷
স্থানীয় কৃষক ও পরিবারের পরামর্শে প্রথমে ০.৩৩ একর জমির উপর কৃষি কাজ শুরু করেছিলেন এই বি.টেক ইঞ্জিনিয়র৷ এখন সব মিলিয়ে ৫০ একর জমি জুড়ে চলছে কর্মযজ্ঞ৷ বীজ কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এজেন্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে তাঁর৷ উন্নতমানের বীজ এনে ঝাড়খণ্ডের এই গ্রামে ফলাচ্ছেন অর্গানিক ফসল৷ টমেটো, ব্রোকোলি, ধুন্দুল-লেটুসের মতো প্রায় ৩০ রকমের সবজি চাষ করে রাকেশের ‘‘ব্রুক এন বিস’৷ ক্যামিকেল নয়, গোবর, ফসলের বর্জ্য এবং কেঁচো দিয়ে তৈরি জৈব সারে পুষ্ট হয়ে ওঠে তাঁদের ফসল৷