জেনিভা: গ্রীষ্মের মরশুম শুরু হতেই তীব্র দাহদাহে ওষ্ঠাগত প্রাণ৷ বছরভর আগুন ঝরবে বলেই ইঙ্গিত মিলেছিল আগেই৷ চৈত্রের শেষ থেকে মিলেছে তার প্রমাণ৷ এরই মধ্যে বিপদের বার্তা দিল রাষ্ট্রপুঞ্জ৷ গ্রিন হাউস গ্যাস ও এল নিনোর জোড়া ছোবলে ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল, এই পাঁচ বছর সবচেয়ে উষ্ণ থাকবে পৃথিবী৷ সর্বকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাক্ষী হবে বিশ্ববাসী। এবং এই পূর্বাভাস প্রায় নিশ্চিত। সতর্ক করে দিল রাষ্ট্রপুঞ্জ৷
রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব আবহাওয়া সংগঠন (ডব্লুএমও) বলেছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বিশ্ব উষ্ণতা যে সীমায় বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল, খুব শীঘ্রই তা ছাপিয়ে যেতে চলেছে। এর আগে, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত, টানা আট বছর এতদিন পর্যন্ত সবচেয়ে উষ্ণ সময় বলে বিবেচিত হয়েছিল। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে জলবায়ু পরিবর্তন যে ভাবে বিপজ্জনক জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, তাতে সেই পুরনো রেকর্ডও ভাঙতে চলেছে। ডব্লুএমও-র দাবি, হাতে যে তথ্য রয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সামগ্রিকভাবে আগামী পাঁচ বছর হতে চলেছে সর্বকালীন উষ্ণতম বছর। এই পাঁচ বছরের মধ্যে আবার কোনও একটি বছরের তাপমাত্রা সহ্যসীমা পার করবে। আর তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৯৮ শতাংশ। তাই গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন নিয়ে এখন থেকেই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে জানাচ্ছে ডব্লুএমও৷ একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে তাদের করফে জানানো হয়েছে।
২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি সাক্ষরিত হয়৷ তাতে সব দেশ একজোট হয়ে সম্মত হয়েছিল যে, ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের যে গড় তাপমাত্রা ছিল, তা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কোনওভাবেই বাড়তে দেওয়া যাবে না। কিন্তু, ২০২২ সালে দেখা গেল, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ওই মাপকাঠির থেকে ১.১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হয়ে গিয়েছে৷ নতুন পূর্বাভাসে ডব্লুএমও বলেছে, ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে কোনও এক বছরে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে (প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত ঊর্ধ্বসীমা) ছাপিয়ে যেতে পারে। এই পাঁচ বছরে প্যারিস চুক্তিতে নির্ধারিত তাপমাত্রার উর্ধ্বসীমা থেকে বিশ্বের গড় উষ্ণতা ১.১ থেকে ১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়বে। শুধু তাই নয়, আগামী দিনে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে ডব্লুএমও।
ডব্লুএমও-এর প্রধান পেটেরি তালাস সতর্ক করে বলেছেন, মাত্রাছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধির গভীর প্রভাব পড়বে মানুষের স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, পানীয় জল ও পরিবেশের উপর। তাই আমাদের এখন থেকেই তৈরি থাকতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি এই মুহূর্তে এল নিনো-ও ভাবাচ্ছে আবহবিদদের। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এর দাপট অনুভূত হবে বলে আশঙ্কা তাদের৷
সাধারণত চিলি, পেরু এবং দক্ষিণ আমেরিকা সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলবর্তী দেশগুলিতে এল নিনো দেখা যায়। এর প্রভাবে মহাসাগরের জলস্তরের তাপমাত্রা একধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। গরম হয়ে ওঠে উপকুলবর্তী বায়ুমণ্ডলও। প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট সেই উষ্ণ স্রোত ছড়িয়ে পড়ে অন্যত্র। এর ফলে সমুদ্রের তলদেশ থেকে ঠান্ডা জলরাশি আর উপরে উঠে আসতে পারে না। তাই সমুদ্রের জলস্তর ঠান্ডা হওয়ারও সুযোগ পায় না। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এল নিনোর প্রভাবে তাপমাত্রা আরও ঊর্ধ্বগামী হবে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>