বর্ধমান: বাড়িতে জ্বলে দুটো ডুম ও একটি পাখা, তার মধ্যে একটি ডুম আবার জিরো পাওয়ারের। কিন্তু বিদ্যুতের বিল এসেছে ১৩ হাজার টাকা। এদিকে অতিমারীর জেরে কাজ হারিয়েছেন, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে তিনজনের বাস। রোজ প্রায় আধপেটা খেয়ে দিন চলছে তাঁর। রাজীব গান্ধী গ্রামীণ বৈদ্যুতিকীকরণ যোজনায় গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুৎ যোগ ঘটেছিল। টালির চালার বাড়িতে বিদ্যুতের মিটার রিডিং করে ১৩ হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দিয়ে যায় বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী। নিজের সমস্ত কিছু বেচে দিলেও তাঁর পক্ষে ওই টাকা মেটানো সম্ভব নয় বলে জানান, দারিদ্র সীমার বসবাসকারী বর্ধমানের ভাতার অঞ্চলের বাসিন্দা নীরজ চৌধুরী৷
বিদ্যুৎ দফতরের অফিসে গিয়ে তিনি কথাও বলেছিলেন। সেখানে সমস্যার কথা শুনে বলা হয়েছিল এনকোয়ারি করা হবে। কিন্তু নীরজ বাবুর কথায়, তেমন কেউই আসেননি। মুম্বইয়ে এমব্রয়ডারির কাজ করতেন তিনি, কিন্তু লকডাউনের পর কাজ চলে যায়, এবছর ইদের সময় তিনি তাঁর গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেন। কাজ নেই, তাই সংসার খরচের বোঝা তিনি আর বইতে পারছেন না। এদিকে গ্রামের মুদিখানা দোকানে ৩ হাজার টাকা ধারবাকি পড়ে আছে, পাশাপাশি পড়শির কাছ থেকেও তিনি ২ হাজার টাকার ঋণ নিয়েছেন। তার ওপর এই বিদ্যুৎ এর বিল তাঁর মাথায় বাজ ফেলেছে।
রাজীব গান্ধী গ্রামীণ বৈদ্যুতিকীকরণ যোজনায় গরিব মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল বিদ্যুতের লাইন। ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত মাসে বিদ্যুৎ খরচে সরকার ভর্তুকি দেয়। ৩০০ ইউনিটের কম বিদ্যুৎ খরচ হলে সরকারি ডিউটি ফি দিতে হয় না। কিন্তু উচ্চ স্ল্যাবে চলে যাওয়াতে অধিকাংশ গ্রাহক ভর্তুকির সুবিধা থেকে বাদ পড়ছেন। একই সঙ্গে বাড়ছে স্ল্যাবের বিন্যাসে ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ খরচও। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির একটি এলাকায় তিনমাসে ১ থেকে ১০২ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম পড়ে ৫ টাকা ৩০পয়সা। পরবর্তী ৭৮ ইউনিট পর্যন্ত দাম ৫ টাকা ৯৭পয়সা। ১২০ ইউনিটে দাম পড়ে ৬ টাকা ৯৭পয়সা এবং ২৫৬ ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ৩১পয়সা। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের উচ্চ স্ল্যাবের টাকা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
নীরজ বাবু কাজ হারিয়ে মুম্বাই থেকে ফিরে গ্রামের স্কুলে ১৪ দিন আইসোলেশনে থাকার পর ফিরেছেন নিজের ঘরে। কিন্তু তারপর আর জোটেনি কোনও কাজ। মুম্বাইতে ১০ বছর আগে বাস থেকে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন, যার ফলে হারিয়েছেন কায়িক শ্রমের ক্ষমতা। নীরজ বাবু বাড়ি ফিরে শারীরিক অক্ষমতার জন্যেই চাষের কাজ করতে পারেননি। বর্তমানে পাইকারি বাজার থেকে ৭-৮ কেজি মাছ কিনে সাইকেল চালিয়ে গ্রামে ফেরি করেন নীরজ বাবু। কোনোদিন ১০০ টাকা জোটে কোনও দিন তাও জোটে না। কিন্তু দুটো ডুম আর একটি পাখা চালিয়ে কিভাবে ১৩ হাজার টাকার বিল আসে, তা তিনি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না। গত সাত বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়ে আকাশ ছোঁয়া হয়েছে। লকডাউনে মিটার রিডিং বন্ধ থাকায় বর্তমানে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়ে চেপেছে বিদ্যুৎ বিলের ফাঁস। সব মিলিয়ে দিশাহারা গরীব শ্রেণির মানুষেরা। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার পাশে না থাকলেও তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে বামফ্রন্ট। বিদ্যুতের বিলের বোঝা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ গরীব স্তরের মানুষদের দুর্দশার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করছে বামফ্রন্ট। এই সমস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলনের পরিকল্পনা করছে সিপিএম।