december
নয়াদিল্লি: সংসদে রংবাজি! অতর্কিতে হামলা রং বোমা নিয়ে৷ তবে বুধবার নয়, বরং আজ বৃহস্পতিবার ছিল হামলার ছক৷ তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য৷
বুধবার সংসদে জিরো আওয়ার চলার সময় আচমকাই দর্শকাসন থেকে লাফিয়ে পড়ে দুই ব্যক্তি৷ খানিকটা ফিল্মি কায়াদায় জুতোর ভিতর থেকে স্মোকক্যান বের করে চলে আক্রমণ৷ হলুদ ধোঁয়ায় ভরে যায় লোকসভা৷ আক্রমণকারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন সাংসদরাও৷ এই ঘটনার সঙ্গে ছ’জন জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে৷ ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ৷ উঠে আসছে বিস্ফোরক সব তথ্য৷ জানা গিয়েছে, বুধবার নয়, বরং আজই ছিল হামলার পরিকল্পনা৷ না, কোনও হটকারী সিদ্ধান্ত নয়৷ বরং, গত এক বছর ধরে সুকৌশলে তৈরি করা হয়েছিল স্মোক বম্ব হামলার নীল নকশা৷ এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে করা হয় রেইকি৷ হ্যাঁ, এমনটাই জানাচ্ছেন দিল্লি পুলিশের গোয়েন্দারা৷ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (UAPA) মামলা রুজু করা হয়েছে। আজ আদালতে পেশ করা হবে তাঁদের।
বুধবার সংসদের অন্দরে স্মোক বম্ব হামলার পরই তদন্তের নির্দেশ দেয় অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক৷ তৈরি করে ফেলা হয় পাঁচ সদস্যের টিম। সেই তদন্তকারী দলের সূত্রেই জানা গিয়েছে, সংসদে রং হামলার ব্লু-প্রিন্ট ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন৷ আজ, অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর হামলার পরিকল্পনা ছিল অভিযুক্তদের। সংসদে ঢুকে অশান্তি সৃষ্টি করা ছিল অন্যতম লক্ষ্য৷ গত বছর জানুয়ারি মাস থেকে বোনা হয়েছিল চক্রান্তের জাল৷ এমনকী, সুচারু ভাবে গোটা পরিকল্পনা এক্সিকিউ করতে গত বাদল অধিবেশনে নতুন সংসদ ভবনে ভিজিটর হিসাবে ঢুকেছিল স্মোক বম্ব হামলার চক্রীরা৷ গোটা সংসদ ভবন ঘুরে রেইকি করে গিয়েছিল তারা৷ কিন্তু প্রশ্ন, হঠাৎ করে হামলার দিন পরিবর্তন করা হল কেন?
জানা গিয়েছে, শেষ মুহূর্তে হামলাকারীদের পরিকল্পনা বানচাল হয়ে যায় বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিনহার অফিস থেকে পাওয়া পাসের কারণে৷ ১৪ ডিসেম্বর হামলার পরিকল্পনা থাকলেও, ১৩ ডিসেম্বরের পাস পায় অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জন। সেই কারণেই দিন বদল৷ এগিয়ে আনা হয় হামলার দিন৷ চার জনের বদলে সংসদের ভিতরে ঢোকে দু’জন। জিরো আওয়ার শেষ হতে তখন মিনিট পাঁচেক বাকি৷ আচমকা দর্শকাশন থেকে ঝাঁপ৷ স্মোক বম্ব নিয়ে স্পিকারের দিকে ছুটে যায় দুই হামলাকারী। হলুদ রঙে ভরে যায় সংসদ৷
তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কয়েকদিন আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আলাদা আলাদা ভাবে দিল্লিতে এসে পৌঁছয় চার অভিযুক্ত। গুরুগ্রামে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেন ললিত ঝাঁ নামে এক যুবক৷ ললিতের বন্ধু ভিকি-র বাড়িতে ওঠে তাঁরা৷ বুধবার সকালে একটি রেডিও ট্যাক্সিতে চেপে সংসদের দিকে রওনা দেয় পাঁচ অভিযুক্ত৷
এদিকে, এই ঘটনার পর থেকেই পলাতক ললিত৷ তাঁর খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ভিকিকেও। জানা গিয়েছে, সংসদে রং বোমা হামলার নেতৃত্বে ছিল মনোরঞ্জন। বাদল অধিবেশনে ভিজিটরস পাস নিয়ে রেইকি করে গিয়েছিল সেই। সাংসদ প্রতাপ সিনহার থেকে ভিজিটরস পাস পেতে তাঁর ব্যক্তিগত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন মনোরঞ্জন। তিনি ১৪ ডিসেম্বরের পাস চেয়েছিলেন৷ কিন্তু সাংসদের অফিস থেকে তাদের ১৩ ডিসেম্বরের পাস দেওয়া হয়। ব্যাস, পরিকল্পনা বদল৷ বুধবারই সংসদে ঢুকে পড়েন মনোরঞ্জন এবং সাগর শর্মা৷ বাইরে অপেক্ষায় থাকে নীলম আজাদ, অমল শিন্ডে ও ললিত ঝাঁ।