লখনউ: বিবাহের নামে ধর্মান্তর বা লাভ জিহাদ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই দেশজুড়ে দানা বেঁধেছে একাধিক বিতর্ক। বিভিন্ন রাজ্যে, বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই ধর্মীয় বিতর্কের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে আনা হয়েছে নতুন ধর্মান্তর বিরোধী আইন বা Anti-conversion law।
‘লাভ জিহাদ’ বা ধর্মান্তর বিরোধী এই আইনের জন্য গোটা উত্তরপ্রদেশজুড়ে ঘৃণার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, এই মর্মে এবার মুখ খুললেন রাজ্যের প্রাক্তন আইএএস অফিসাররা। জানা গিয়েছে, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে তাঁরা এই নতুন আইনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে মোট ১০৪ জন প্রাক্তন আইএএস অফিসারের স্বাক্ষর রয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷
ঠিক কী বলা হয়েছে চিঠিতে? সর্বভারতীয় সংবাদসংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী শিবশঙ্কর মেনন, নিরুপমা রাওয়ের মতো ব্যক্তিত্বরা মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে দেওয়া চিঠিতে লিখেছেন, “উত্তরপ্রদেশ এক সময় গঙ্গা-যমুনা সভ্যতার মিলনস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল, এখন তা ঘৃণা, বিচ্ছিন্নতা আর মৌলবাদের রাজনীতির আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি এখন সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে।’’ এখানেই শেষ নয়, রাজ্যজুড়ে কীভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে চিহ্নিত ও অপদস্থ করা হচ্ছে, সে বিষয়েও চিঠিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাক্ষরকারীরা৷
গত সপ্তাহেই উত্তর প্রদেশের বিজনোরে ‘লাভ জিহাদ’ সন্দেহে এক যুগলকে আটক করেছিল পুলিশ। জানা গিয়েছে, মেয়েটির আপত্তি সত্ত্বেও ওই যুবককে নতুন আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘‘এই ধর্মান্তর বিরোধী আইনকে আদতে ভারতীয় মুসলিম যুবকদের বিরুদ্ধে একটি শাস্তির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে মেয়েদের স্বাধীনতাতেও হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ এলাহাবাদ সহ একাধিক হাইকোর্ট যখন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়া সংবিধান অনুযায়ী যে কোনও ভারতীয়ের মৌলিক অধিকার, সেখানে উত্তরপ্রদেশ সরকার নতুন আইনের মাধ্যমে সংবিধানের অবমাননা করছে, অভিযোগ করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন আইএএস কর্মীরা। বস্তুত, উত্তর প্রদেশে ধর্মান্তর বিরোধী নতুন আইনের পরেই লাগাতার গ্রেফতারির ঘটনা সামনে আসছে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বাক্ষরকারীরা।