ভুবনেশ্বর: শুনতে সমস্যা হয় তাঁর, কিন্তু শিক্ষাদানে কোনরকম গাফিলতি করেননি ১০২ বছরের নন্দ প্রুস্তি। বিগত ৭০ বছর ধরে শিশুদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়ে আসছেন তিনি। শারীরিক সমস্যা হলেও, শিক্ষাদানে কোনরকম বাধা হতে দেননি ১০২ বছরের স্যার।
নন্দ জানাচ্ছেন, একই পরিবারের তিন প্রজন্ম তার কাছে পড়াশোনা করছে। এইভাবে তিনি বহুজনকে শিক্ষাদান করেছেন। ওড়িশা রাজ্যের জয়পুর জেলার কান্তিরা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। এই এলাকা ভুবনেশ্বর থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। সেই গ্রামের প্রত্যেকে এই বৃদ্ধকে ‘নন্দ স্যার’ নামেই চেনে। তার নাতির কথায়, দাদু কবে থেকে পড়ানো শুরু করেছেন তা তার জানা নেই, তবে কমপক্ষে ৭০ বছর হবেই। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে বিনা পারিশ্রমিকে শিক্ষাদান করে আসছেন তিনি। এ বিষয়ে নন্দ স্যার জানান, স্বাধীনতার প্রাক্কালে তার গ্রামের সবাই অশিক্ষিত ছিল। সেখানে শিক্ষা দেওয়ার মত কেউ ছিল না। তাই তিনি তার মামার বাড়ি গিয়ে পড়াশোনা করেছেন। পরবর্তী সময়ে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন তিনি, তারপর অন্যদের পড়ানো শুরু করেন।
তিনি জানাচ্ছেন, গ্রামে ফিরে এসে তিনি সমস্ত বাচ্চাদের দেখতেন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে। কেউ শিক্ষিত ছিল না। এখানে স্কুলে যাওয়া তো দূর, প্রাথমিক শিক্ষার জায়গাও ছিল না। তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন, এই গ্রামের সকল বাচ্চাদের পড়াবেন। তারপর থেকেই নিজের লক্ষ্যে পথ চলা শুরু করেন নন্দ। এখন দেখতে দেখতে প্রায় ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও নিজের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছেন তিনি। যখন নন্দ স্যার পড়ানো শুরু করেছিলেন তখন কোন বাড়িতে বা পাঠশালায় নয়, গাছের তলায় ক্লাস হত তার। শুধুমাত্র বাচ্চাদের শিক্ষাদানের জন্য কাজ শুরু করায় তিনি কারোর থেকে পারিশ্রমিক নিতেন না। তিনি জানাচ্ছেন, বাচ্চাদের পড়িয়ে তিনি ভীষণ আনন্দ পান। তিনি চান, সকলে বড় হয়ে ভালো মানুষ হোক, এই চাহিদার কাছে অর্থ কিছুই নয়। সেই কারণে আজ পর্যন্ত পারিশ্রমিক নেন না তিনি। এই কারণেই সেই গ্রামের অধিকাংশ বাবা-মারা নন্দ স্যারের কাছে তার বাচ্চাদের পড়তে পাঠান। এমনকি শুধু ছোট বাচ্চারা নয়, নিচু ক্লাসের ছাত্ররাও তার কাছে পড়তে আসে।