মিড ডে মিলেও ১০০ কোটির দুর্নীতি! তৃণমূল আমলে দুর্নীতির শেষ কোথায়?

মিড ডে মিলেও ১০০ কোটির দুর্নীতি! তৃণমূল আমলে দুর্নীতির শেষ কোথায়?

 

কলকাতা:  যে কোনও ব্যক্তি, সংস্থা বা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা মানেই যে তারা দোষী, সেটা বলা যাবে না। আবার নির্দোষ সেটাও বলা যায় না। যতক্ষণ না পর্যন্ত তদন্ত শেষ হওয়ার পর আদালতের রায়ে কেউ দোষী প্রমাণিত হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁদের অভিযুক্ত হিসেবেই দেখা হয়। সেই অর্থে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তাতে এখনই সরকার বা তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের দোষী বলা যাবে না। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, এত দুর্নীতির অভিযোগ উঠবে কেন? সবটাই কি বিরোধীদের চক্রান্ত? নাকি এই সমস্ত অভিযোগের পিছনে যথেষ্ট সত্যতা আছে? এই বিতর্কের মধ্যেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিড ডে মিলেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠল। যে ঘটনা পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসকদলকে যে আরও অস্বস্তিতে ফেলে দিল, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

 
ঘটনা হল কোনও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই তৃণমূল তার ভিত্তিতে বিরোধীদের নিশানা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঠিক সেই জায়গা থেকে কলকাতা হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছিল সরকার হিসেবে তৃণমূলের তো উচিত দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেই তার যথাযথ তদন্ত করা এবং তদন্তে সহযোগিতা করা। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কেন তারা উচ্চতর আদালত বা সুপ্রিম কোর্টে চলে যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন একাধিকবার উঠেছে। তবে কি তৃণমূল দুর্নীতির সঠিক তদন্ত হোক সেটা চাইছে না? এই অভিযোগ বহুবার করেছে বিরোধীরা।

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং ইডি বহুবার অভিযোগ করে বলেছে তদন্তের কাজে রাজ্য প্রশাসন তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে অভিযোগ উঠেছে যে তৃণমূল ভুল হিসেব দিয়ে পড়ুয়াদের মিড ডে মিলে একশো কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে। পড়ুয়াদের মিড ডে মিলের টাকা  নয়ছয় হয়েছে, এই অভিযোগ কেন উঠবে? এমনিতেই পড়ুয়া পিছু রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের যে সামান্য টাকা বরাদ্দ আছে, তাতে রোজ ভাল কিছু তাদের মুখে তুলে দেওয়া যায় না। সেখানে যদি সত্যিই এই ধরনের দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে তার নিন্দার কোনও ভাষা থাকতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই এই ইস্যুতে এখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি।

বিষয়টি নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করে টুইটে লিখেছেন, “মাত্র দুটি ত্রৈমাসিকেই ১০০ কোটির তছরুপ! গত বারো বছরে কত টাকা চুরি হয়েছে ভাবুন। প্রশাসন চালানোর নামে দিনে দুপুরে ডাকাতি করছে রাজ্য সরকার”। সেই সঙ্গে শুভেন্দুর অভিযোগ এটাই রাজ্য সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি। যদিও তৃণমূল বিষয়টিকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণ হিসেবেই দেখছে।

বর্তমানে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে যেখানে এমন দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে এখন বোধহয় কেউ আর অবাক হন না। কারণ শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে কয়লা পাচার, গরু পাচার-সহ এত দুর্নীতির অভিযোগ বিগত কয়েক মাসে উঠেছে, তাতে কোনও কিছুতেই যেন মানুষ এখন আর অবাক হন না। নিত্যনতুন নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে। এই আবহের মধ্যেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। আর সেই নির্বাচনে এই দুর্নীতির অভিযোগগুলির প্রভাব যে পড়বেই, সেটা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল। তাই তৃণমূল এই সমস্ত অভিযোগকে দূরে সরিয়ে রেখে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে কতটা ভাল ফল করে এখন সেটাই দেখার।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *