ওয়াশিংটন: জীবন অনিশ্চিত। যত দিন প্রাণ, ততদিন লড়াই৷ অসুখ আছে, যন্ত্রণা আছে, মৃত্যু আছে। কিন্তু সবকিছুর উপরে রয়েছে বেঁচে থাকার আনন্দ। জীবন ক্ষনিকের হলেও প্রাণ খুলে বাঁচাই আসল জীবন৷ কারণ, ‘জিন্দেগি লম্বি নেহি, বড়ি হোনি চাহিয়ে।’
বয়স তার মাত্র দশ৷ এই বয়সের অধিকাংশ বাচ্চাই মশগুল থাকে বার্বি ডলের দুনিয়ায়৷ কিংবা যেতে চায় ডিজনিল্যান্ড৷ কিন্ত এমা চাইত বিয়ে করতে৷ কথাটা বলতে বলতেই গলাটা ধরে এল তার মায়ের৷ মেয়ের কথা বলতে বলতেই চোখের কোন ভিজে উঠল তাঁর৷ চল্লিশ ছুঁইছুঁই এলিনা এডওয়ার্ডস ক্যারোলাইনার বাসিন্দা৷ চোখ দুটো আটকে রয়েছে হাতে ধরা অ্যালবামে৷ মেয়ের বিয়ের অ্যালবাম৷ সেখানে বেগুনি রং-এর পোশাকে এমা যেন ঠিক প্রিন্সেস৷ পাশে দাঁড়িয়ে এমার ছোট্ট বর ড্যানিয়েল মার্শাল ক্রিস্টোফার৷ এমা তাকে ভালোবেসে বলত ‘ডিজে’৷
বলত? মানে?
ছোট্ট এমার শরীরে বাসা বাঁধে মারণ রোগ লিউকেমিয়া৷ গত বছর এপ্রিল মাসে প্রথম ধরা পড়ে সেই রোগ৷ মেয়ের অসুখের কথা শুনে কিন্তু ভেঙে পড়েননি এলিনা ও তাঁর স্বামী অ্যারন৷ তাঁরা জানাত, তাঁদের ছোট্ট মেয়ে ফাইটার৷ সে ঠিক এই সঙ্কটের পাহাড় জয় করে নেবেই৷ কিন্তু ভগবানের মর্জি ছিল ভিন্ন৷ একটা বছর দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই করেন তাঁরা৷ কিন্তু গত জুন মাসে বুঝতে পারেন আর আশা নেই৷ কোনও ভাবেই আর ভালো হবে না এমা৷ ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে হোয়াইট ব্লাড সেলগুলো৷ ও আর পেরে উঠছে না৷ এখন উপায়? না, এমাকে বাঁচানোর আর কোনও উপায় খুঁজে পাননি তাঁরা৷ তবে মেয়ের শেষ ইচ্ছে পূরণে মরিয়া হয়ে ওঠেন এলিনা ও অ্যারন৷ ১২ জুলাই চোখ বোজে এমা৷ এর ঠিক ১২ দিন আগে বেস্ট ফ্রেন্ডের সঙ্গে বিয়ে হয় তার৷ সেই বিয়েতে সামিল হয়েছিলেন ১০০ অতিথিও৷
এমার হাতে আর সময় নেই বুঝতে পেরেই বিয়ের জন্য এগিয়ে আসেন ওর প্রিয়তম বন্ধু তথা প্রেমিক ড্যানিয়েল মার্শাল ক্রিস্টোফার ‘ডিজে’ উইলিয়ামস এবং তার বাবা মা। মাত্র ২ দিনের মধ্যে বিয়ের আয়োজন সেরে ফেলা হয়। হোক না খনিকের বিয়ে, নিয়ম কিংবা অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে কোনও খামতি ছিল না। পোশাক এবং অন্যান্য জিনিসপত্র কেনার পাশাপাশি ভেন্যুও বুক করে ফেলা হয়। এরপর গত ২৯ জুন বেগুনি রঙের গাউনে সেজে বিয়ের আসরে হাজির হয় এমা।
বছর দু’য়েক আগের কথা৷ এমার স্কুল থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল তাঁর বাবা-মাকে৷ অভিযোগ, টিফিন ব্রেকে এমা নাকি আর একটু হলে তার বেস্ট ফ্রেন্ড ডিজে-কে বিয়েই করে ফেলছিল৷ এর জন্য বাড়িতে খানিক বকুনিও খেতে হয়েছিল তাকে৷ তবে ওর ভালোবাসার কাছে হার মানে অ্যারন-এলিনাও৷ মেয়েকে হারানোর আগে তার শেষ ইচ্ছে পূরণ করে বাবা-মা-ই৷ যে ডিজে-র জন্য পাগল ছিল এমা, সেই ডিজে-র সঙ্গেই আংটি বদল হয় তার৷ আংটি বদলের সময় কোনওভাবে সরিয়ে রেখেছিল অক্সিজেন মাস্ক৷ ওদের দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনও স্বর্গরাজ্যের রাজপুত্র আর রাজকন্যে৷ স্বপ্নপূণের সেই মুহূর্তে সব কষ্ট ভুলে বন্ধু ডিজের দিকে এমা তাকিয়েছিল স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে৷ একেবারে নিষ্পলক..