সবকিছু কি ঠিকঠাক চলছে না? চিন্তিত মোদী? তাই বিতর্কিত ভাষণ!

সবকিছু কি ঠিকঠাক চলছে না? চিন্তিত মোদী? তাই বিতর্কিত ভাষণ!

 নিজস্ব প্রতিনিধি: ইসবার চারশো পার! এই দাবি বহুদিন ধরেই করছেন বিজেপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই সুর বহুদিন আগে বেঁধে দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম পর্বের নির্বাচনের পরই মোদীকে বেশ বিভ্রান্ত লাগছে। আসলে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের মতো রাজ্য যেখানে বিজেপি সবচেয়ে বেশি আসন পাবে বলে মনে করা হচ্ছে, সেখানে ভোটের হার এতটাই কম হয়েছে যা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে বিজেপি।‌ তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রথম দফার একশোর বেশি আসনে যে ভোট হয়েছে সেখানে সংখ্যালঘুদের উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিতে দেখা গিয়েছে। সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ যে বিজেপি পাবে না সেটা আজ আর নতুন কথা নয়। সেই জায়গা থেকে হিন্দুরা ভোট কম দেওয়ায় চিন্তিত বিজেপি।

এরপরই প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জনসভায় যেভাবে বক্তব্য রাখছেন তা ধর্মীয় মেরুকরণকে তীব্র থেকে তীব্রতর করছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। যেমন মঙ্গলবার রাজস্থানের টঙ্ক-সওয়াই মাধোপুর কেন্দ্রে ভোট প্রচারে গিয়ে মোদী বলেছেন,”কংগ্রেস শাসনে হনুমান চালিশা শোনা যেন অপরাধ। আজ হনুমান জয়ন্তীর দিন কয়েক দিন আগের একটি কথা মনে পড়ছে। কংগ্রেস শাসিত কর্ণাটকে এক ব্যবসায়ী তাঁর দোকানে বসে হনুমান চালিশা শুনছিলেন। সেই ‘অপরাধে’ তাঁকে মারধর করে রক্তাক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এই রাজস্থানে আগে যখন কংগ্রেস সরকার ছিল তখন রামনবমীতে শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।” টঙ্ক-সওয়াই মাধোপুর কেন্দ্রের একটা বড় অংশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে আরও বলতে শোনা গিয়েছে,”গত দুটি লোকসভা নির্বাচনে রাজস্থানের সমস্ত আসনে আপনারা জিতিয়েছিলেন বিজেপিকে। এবারেও আপনাদের সেটা করে দেখাতে হবে। না হলে আপনাদের ধন-সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে কংগ্রেস ওদের বিশেষ লোকদের (পড়ুন সংখ্যালঘুু) হাতে তুলে দেবে। আমি এ কথা বলছি বলে ওরা আমাকে গালমন্দ করছে।”

গত রবিবার রাজস্থানের বাঁশওয়াড়ায় বিজেপির সভায় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ একবার বলেছিলেন দেশের সম্পদের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার রয়েছে সংখ্যালঘুদের। তাই কংগ্রেস দেশবাসীর সম্পদ কত আছে সমীক্ষা করে দেখতে চায়। সেই সম্পদ ওরা সংখ্যালঘু ও অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে।” এরপর উত্তরপ্রদেশের একটি সভায় মোদী বলেছিলেন, “কংগ্রেস ক্ষমতা এলে মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে”। স্বাভাবিকভাবেই প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। আর মঙ্গলবারের সভায় মোদীর হাতে বজরংবলীর শক্তির প্রতীক গদা দেখা গিয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ রাজনৈতিক কারণেই আরও বেশি করে হিন্দুত্বে শান দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।

ঘটনা হল বিজেপি বারবার দাবি করে গত দশ বছরে তারা এত উন্নয়ন করেছে যে তৃতীয়বারেও কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসবেন মোদী। কিন্তু সেই জায়গায় উন্নয়নের কথা না বলে কেন ধর্মীয় মেরুকরণ করে ভোট চাইতে হচ্ছে তাঁদের, সেই প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক মহল। তবে কী সবকিছু ঠিকঠাক চলছে না বলেই বিজেপি এভাবে প্রচার করতে শুরু করে দিয়েছে? কংগ্রেসের দাবি বিজেপি এবার দু’শো আসনও পার করতে পারবে না। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যেভাবে প্রচার করতে শুরু করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *