লক্ষ্য তীব্র মেরুকরণ, দলীয় প্রার্থীদের চিঠি পাঠিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা মোদীর

লক্ষ্য তীব্র মেরুকরণ, দলীয় প্রার্থীদের চিঠি পাঠিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা মোদীর

নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রচারের অভিমুখ বিগত কয়েক দিন ধরে বদলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত দশ বছরের উন্নয়ন ইস্যু নয়, এবার মোদি মূলত হিন্দুত্ব ইস্যুতেই যে বেশি জোর দিচ্ছেন সেটা দিনদিন স্পষ্ট হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তৃতীয় দফার নির্বাচনের আগে বিজেপি প্রার্থীদের চিঠি দিয়ে বিশেষ বার্তা পাঠালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেস যখন সংরক্ষণ ইস্যুতে বিজেপিকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে, সেখানে মোদি বিজেপি প্রার্থীদের পাঠানো চিঠিতেলিখেছেন, “প্রতিক্রিয়াশীলদের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসিদের থেকে সংরক্ষণ ছিনিয়ে নিয়ে মুসলিমদের সংরক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে কংগ্রেস এবং ‘ইন্ডিয়া’ জোট। এটাই ওদের রাজনীতি।” সেই সঙ্গে বিজেপি প্রার্থীরা এই ইস্যুতে যাতে কংগ্রেসকে আরও বেশি করে নিশানা করেন সেই পরামর্শও দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

গত ১৯ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচন শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে। তার আগের দিন অর্থাৎ ১৮ এপ্রিল বিজেপি তথা এনডিএ শিবিরের প্রার্থীদের চিঠি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গত দশ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার দেশ জুড়ে কতটা উন্নয়ন করেছে সেই বার্তা ছিল মোদির চিঠিতে। কিন্তু তৃতীয় দফার ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী যে চিঠি দলীয় প্রার্থীদের পাঠিয়েছেন, তাতে মেরুকরণের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

৭-মে তৃতীয় পর্বে দেশের ৯৪ টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে। পরিসংখ্যান বলছে এই আসনগুলিতে তফসিলি জাতি, জনজাতি ও ওবিসির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি রয়েছে আগেরগুলির তুলনায়। সদ্য কংগ্রেস অভিযোগ করেছে বিজেপি নাকি চারশো আসন পেলে সংবিধান সংশোধন করে তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসিদের জন্য থাকা সংরক্ষণ ব্যবস্থা তুলে দেবে। যদিও বিজেপি কংগ্রেসের সেই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছে। পাল্টা বিজেপির দাবি, কংগ্রেস মুসলিমদের সংরক্ষণের জন্য বহুদিন ধরেই ব্যস্ত রয়েছে। আর কংগ্রেস সব সময় সংখ্যালঘুকে তোষণ করতে চায়, এই অভিযোগ সাম্প্রতিককালে বারবার করতে শোনা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে।

কিছুদিন আগেই  রাজস্থানে ভোট প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে শোনা গিয়েছিল,”কংগ্রেস শাসনে হনুমান চালিশা শোনা যেন অপরাধ। কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকে এক ব্যবসায়ী তাঁর দোকানে বসে হনুমান চালিশা শুনছিলেন, সেই ‘অপরাধে’ তাঁকে মারধর করে রক্তাক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এই রাজস্থানে আগে যখন কংগ্রেস সরকার ছিল তখন রামনবমীতে শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে কংগ্রেস ওদের বিশেষ লোকদের (পড়ুন সংখ্যালঘুু) হাতে তুলে দিতে চায়। আমি এ কথা বলছি বলে ওরা আমাকে গালমন্দ করছে।” এমনকী কংগ্রেসকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রীকে আরও বলতে শোনা গিয়েছে,”কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে।” রাজনৈতিক মহল মনে করছে আগামী দফার নির্বাচনগুলিতে উন্নয়নের পাশাপাশি ধর্মীয় মেরুকরণকে সমান্তরাল ইস্যু করে চারশো আসনের লক্ষ্যে ঝাঁপাতে চাইছে বিজেপি। এই আবহের মধ্যে তৃতীয় দফার নির্বাচনে বিজেপি তথা এনডিএ প্রার্থীদের প্রধানমন্ত্রী যে চিঠি দিলেন, আর তাতে সংখ্যালঘুদের নিয়ে কংগ্রেসকে যেভাবে নিশানা করা হয়েছে, তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *